সন্তানদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে চা বিক্রেতা মনিরুজ্জামানের
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
জেলা প্রতিনিধি,গোপালগঞ্জঃ
অসচ্ছলতার কারণে নিজে লেখাপড়া করতে পারেননি গোপালগঞ্জের মোকসেদপুর থানার পাতরাইল গ্রামের মো. মনিরুজ্জামান। তাই ছেলেমেয়েকে শিক্ষিত করার স্বপ্ন তাকে তাড়িয়ে বেড়াতো সব সময়। চা বিক্রি করে জীবন চালানোই যেখানে কষ্টকর, সে কাজ করে সন্তানদের লেখাপড়া করানো সহজ নয় জেনেও থেমে থাকেননি তিনি।
রাস্তার ধারে চা বিক্রি করেই ছেলেমেয়েকে স্কুল কলেজ এবং শেষ পর্যন্ত উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান মনিরুজ্জামান। দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে এক ছেলে ও এক মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার ব্রত নেন তিনি। অবশেষে সেই স্বপ্ন সফল হতে চলেছে তার।
স্ত্রী মাহমুদা আক্তার বিউটি, মেয়ে মনিরা আক্তার আশা ও ছেলে আশিক হোসেনকে নিয়ে চার জন সদস্যের পরিবার মো. মনিরুজ্জামানের (৫৬)। রাজধানীর মগবাজার ডাক্তারের গলিতে থাকেন দুই রুমের এক ভাড়া বাসায়।
মনিরুজ্জামান জানান, লেখাপড়া করার কোনও সুযোগ হয়নি তার। ১৯৯১ সালে বিয়ে করেন মাহমুদা আক্তার বিউটিকে। তিন বছর পর ১৯৯৪ সালে ঢাকা আসেন স্বামী-স্ত্রী। নানা চড়াই-উতরাইয়ের মাধ্যমে সংসার চলে তার। শেষ পর্যন্ত রাস্তায় চা বিক্রির কাজে মনোযোগ দেন তিনি। মেয়ে মনিরা আক্তার আশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালি বিষয়ে ভর্তি হয়। আর ছেলে আশিক হোসেনকে ভর্তি করান অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে।
মো. মনিরুজ্জামান ও মাহমুদা আক্তার বিউটি দম্পতি তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন সত্যি করেছেন।মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালি বিষয় নিয়ে মাস্টার্স করেছে মনিরা আক্তার আশা। ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে ২০২৩ সালে বেরিয়েছে সে। ছেলে আশিক হোসেনের লেখাপড়া এখনও শেষ হয়নি। অল্প দিনেই শেষ হবে।
স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্ত্রী মাহমুদা আক্তার বিউটি বলেন, ‘১৯৯১ সালের বিয়ের তিন বছর পর ঢাকায় এসেছি। ১৬ হাজার টাকা বাসা ভাড়া লাগে। দুই রুমের বাসায় ছেলে মেয়েদের নিয়ে কষ্টে থাকি।’ চায়ের দোকান পাশে ভ্যানে সবজিও বিক্রি করেন মো. মনিরুজ্জামান। সন্তানদের লেখাপড়া করানোর জন্য বাড়তি আয় করতে হয় তাদের। এই কাজে তাকে সহায়তা করেন স্ত্রী বিউটি।
মেয়ে লেখাপড়া শেষ চাকরি পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে হাস্যজ্জ্বল মুখে বলেন, চাকরি একটা না একটা তো হবেই। শিক্ষিত করতে পেরেছি, আমি চাই— তারা মানুষ হোক, এটাই বড় কথা। ওরা নিজেরা তো চিন্তা করবে তাদের ভবিষ্যত নিয়ে।মনিরুজ্জামান জানান, চাকরি পাওয়া না পাওয়া নিয়ে তার কোনও হতাশা নেই। শিক্ষিত করা ছিল তার জন্য চ্যালেঞ্জ। সে করতে পেরেই সে খুশি। সন্তানদের উচ্চশিক্ষার এই আকাঙ্ক্ষা তাকে পরিশ্রম করতে পারাটা সহজ করে দিয়েছে বলে জানান মনিরুজ্জামান।