সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বাজারে মিলছে না ডিম-আলু-পেঁয়াজ
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
সেলিনা আক্তার:
সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম কমিয়ে নির্ধারণ করে দিয়েছে এ খবরে যারা আজ শুক্রবার সকালে কম দামে কেনার আশায় বাজারে গেছেন, তাদের অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরেছেন। কারণ সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম মানছেন না বিক্রেতারা। আলু, পেঁয়াজ, ডিম এখনো বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা, আলুর দাম প্রতিকেজি ৩৫-৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। ঘোষণার পর থেকেই বাজারে এ দাম কার্যকর হওয়ার কথা। তবে পরের দিন শুক্রবারও সেটা হয় না। পুরো চিত্রই উল্টো দেখা যায়। আজ শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে লালবাগের নবাবগঞ্জ, পলাশী, কিল্লার মোড়, কামরাঙ্গীরচরের মাদবর বাজার, রসুলপুর ব্রিজমার্কেটের ব্রিজ সংলগ্ন গরিবের বাজার, রনি মার্কট, রামপুরা, মালিবাগ এবং শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি হালি ডিম আগের মতো ৫০-৫৫ টাকা অর্থাৎ প্রতিটি সাড়ে ১২ থেকে ১৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি সাদা আলু ৫০ টাকা এবং লাল আলু ৫৫ টাকায় রয়ে গেছে। কমেনি পেঁয়াজের দামও। ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য বিক্রি করছেন না কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে বিক্রেতাদের অজুহাতের শেষ নেই। কয়েকজন বিক্রেতা আবার বলছেন তারা নাকি বেঁধে দেওয়া দামের বিষয়টি জানেন-ই না। তবে অধিকাংশরা বলছেন বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর হতে কিছুটা সময় লাগবে।
রামপুরা কাঁচাবাজারের মুদি পণ্য বিক্রেতা শফিউল্লাহ বলেন, সরকারের হিসাব আমাদের জানা নাই। আমরা বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করি, কমে কিনলে কমে বেচি। ওই বাজারে মহিউদ্দিন এন্টারপ্রাইজ নামের দোকানের স্বত্বাধিকারী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, কাল মাত্র দাম কমিয়েছে শুনেছি। একটু সময় দেন। আগের কেনা মাল (পণ্য) শেষ হোক। আমরা যখন পাইকারিতে কম দামে কিনতে পারবো, তখন অটোমেটিক খুচরাই কমে যাবে। সরকারকে বলেন, পাইকারি বাজার তদারকি করতে।
মালিবাগ বাজারে তাহের নামের এক ডিম বিক্রেতা বলেন, সরকার ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করেছে, আমিও ১২ টাকা বিক্রি করবো। তবে ১০০ পিস নিতে হবে একসঙ্গে। কারণ পাইকারি ডিম কিনেছি ১২ টাকা দরে। এরপর ভাড়া ও অন্যান্য খরচ আছে। আমিতো আর লোকসানে বেচবো না। লোকসানের টাকা কি সরকার আমাকে দেবে?
ডিম বিক্রেতা তাহের যখন এমন মন্তব্য করছিলেন, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন এনামুল হক নামে একজন ক্রেতা। তিনি কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে বিক্রেতাকে বলেন, ‘কেন দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তো আপনারা (বিক্রেতারা) বাড়তি দামে বিক্রি শুরু করেন। তবে কমলে কেন এত অজুহাত?
শান্তিনগর বাজারে তামিম এন্টারপ্রাইজ নামের দোকানের বিক্রেতা ইউনুস আলী বলেন, ক্যাশমেমো আছে। সেই দামের হিসাবে পণ্য বিক্রি করছি। হুট করে বললেই কমানো যায় না। আগে দেখি কমে কিনতে পারি কি না।
এদিকে, বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বেঁধে দেওয়া দাম বাস্তবায়নে ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) বাজার মনিটরিং করবেন। জেলা-উপজেলাসহ বড় বড় শহরে মনিটরিং চলবে। সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে। তবে আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর কয়েকটি বাজারে কোনো ধরনের মনিটরিং কার্যক্রম চোখে পড়েনি।
এসব বিষয়ে শান্তিনগর বাজারে পণ্য কিনতে আসা ওবায়দুল হক নামের একজন কলেজ শিক্ষক বলেন, এর আগেও করোনার সময় একবার আলুর দাম অস্থিতিশীল হয়েছিল। তখন দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তেল চিনির দামও নিয়মিত বেঁধে দেওয়া হয়, কিন্তু বাজারে এসব বিক্রেতারা মানেন না। তিনি বলেন, এখনো বাজারে চিনির দাম ১২৫ টাকা নির্ধারিত রয়েছে, কিন্তু আপনি বাজারে কোথাও চিনি ১৩৫-১৪০ টাকার নিচে কিনতে পারবেন না। তাহলে এসব কার্যক্রম সরকারের লোক দেখানো নয় কি?
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক আরও বলেন , তারপরও আমরা ক্রেতারা আশায় থাকি, সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে সফল হবে। ক্রেতারা সামান্য হলেও স্বস্তি পাবে। কারণ বর্তমান বাজারে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের ভালোভাবে বাঁচতে দিচ্ছে না।
অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একই বৈঠকে সয়াবিন তেলের দাম কমানোর ঘোষণাও দেয়। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন দাম ৫ টাকা কমে এখন ১৬৯ টাকা হওয়ার কথা। তবে বাজারে এখনো কম দামের তেল সরবরাহ হয়নি। ফলে ভোক্তাকে সেই আগের ৫ টাকা বেশি দাম গুনতে হচ্ছে। প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৭৪ টাকা দরে।