সাতকানিয়ায় থামছে না টপ সয়েল বিক্রি, উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষিজমি
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় শতাধিক ইটভাটা সচল রাখতে রাতের আঁধারে অবাধে কেটে নেওয়া হচ্ছে কৃষিজমির টপ সয়েল। যার ফলে জমিগুলো উর্বরতা হারিয়ে পরিণত হচ্ছে অনাবাদি জমিতে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও কৃষকের ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে ইটভাটায় বিক্রির ঘটনা ঘটছে। এতে তৈরি হচ্ছে ভয়াবহ পরিবেশ ও কৃষি সংকট। বিজ্ঞানের ভাষায়, জমির টপ সয়েলে থাকে সবচেয়ে ঘনত্বের জৈবিক বস্তু। পৃথিবীর প্রায় ৯৫ শতাংশ খাদ্য উৎপাদনে উদ্ভিদ এসব জৈবিক বস্তু সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করে। ফলে একবার কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নিলে তা আবার পূর্ণতা লাভ করতে সময় লাগে প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর।
মাটির উৎপাদন ক্ষমতা রক্ষা করতে যেখানে টপ সয়েল রক্ষা করা দরকার, সেখানে অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা জমির মালিকদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের জমির মাটি ক্রয় করছেন।
স্থানীয়রা জানান, শীত মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন উপজেলায় ইটভাটা ও বিভিন্ন স্থাপনা ভরাটের কাজে শুরু হয় আবাদি জমির টপ সয়েল কাটার হিড়িক। কৃষকরা টপ সয়েল বিক্রির কুফল সম্পর্কে তেমন অবগত নয়। ফলে তারা বেশিরভাগ সময়েই সামান্য মূল্যে মাটি বিক্রি করে দেন। তাছাড়া প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট জমির মালিকদের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করছে।
সরেজমিন দেখা যায়, সাতকানিয়া উপজেলার সাতকানিয়া সদর, ঢেমশা, কেঁওচিয়া, ছদাহা, ধর্মপুর, বাজালিয়া, নলুয়া, খাগরিয়া, মাদার্শা, এওচিয়া এলাকার আবাদযোগ্য কৃষি জমিগুলো মাটি খেকো সিন্ডিকেটের টার্গেটে পরিণত হয়েছে।
এদিকে গত কয়েক মাসে সাতকানিয়া, মিরসরাই, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, বোয়ালখালীসহ চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি উপজেলায় কৃষিজমির মাটি কাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। অথচ অভিযান শেষ হলেই ফের শুরু হয় মাটি কাটা। বিশেষ করে রাতের আঁধারে স্কেভেটর দিয়ে কৃষিজমির টপ সয়েল কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরপর শত শত ডাম্পার ট্রাকে করে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে সেই মাটি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, জমির টপ সয়েল ও পাহাড় কাটার বিষয়ে আমরা বরাবরের মতোই সোচ্চার। আমি নিজে গত বছর ২৫ জনকে জেল দিয়েছি, ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ বছরও আমরা অভিযান করে যাচ্ছি। দিনে আমার এসিল্যান্ড গেলে আমি রাতে যাই। ১৭টি ইউনিয়নে অনেকের পাহাড় আছে। অনেকে বাড়িঘর তৈরির জন্য মাটি কাটতে চায়। আমরা এক দিকে বের হলে তারা অন্যদিকে সরে যায়। এক ধরনের লুকোচুরি খেলা। আমরা যেতে যেতে তারা সচেতন হয়ে যায়। মাঝে মাঝে আমরা অভিযান চালিয়ে ধরতে পারি, স্কেভেটার জব্দ করা হয়।
প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেক ইউনিয়নের কৃষিজমির মাটি, পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলন প্রতিরোধে একটি করে কমিটি করে দিয়েছি। এটি বন্ধ করতে হলে আমাদের সামাজিক প্রতিরোধও গড়ে তুলতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় আমরা গত মাসে দুটি ইটভাটায় জরিমানা করেছি। গত বছরও চারটা ধ্বংস করেছি। আবার অভিযান হবে বলে জানান এই নির্বাহী কর্মকর্তা।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কৃষিজমির টপ সয়েল ৬ ইঞ্চির বেশি কাটা হলে সেটি জমির উর্বরতার জন্য হুমকি। টপ সয়েল কাটলে জমি উর্বরতা হারায়। একটি গবেষণায় আছে, ৬ ইঞ্চির বেশি গভীরে যখন মাটি কাটা হয় তখন ওই জমিকে পূর্ব অবস্থায়, অর্থাৎ চাষযোগ্য করে গড়তে ২৫-৩০ বছর পরিচর্যা করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, সাতকানিয়ায় এরকম জমির টপ সয়েল কাটার খবর পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানাই। অনেক সময় আমরা জমিতে পরিদর্শনে গিয়ে ফোনে অনেকের হুমকি পেয়েছি। এক কথায় এটির প্রতিরোধ করা দরকার। এভাবে চলতে থাকলে সাতকানিয়াসহ সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোর জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।