সাবেক ১০ মন্ত্রীসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো

প্রকাশিত: ৪:২৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৭, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে গণহত্যায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সাবেক ১০ মন্ত্রীসহ ১৪ জনকে। ১৮ নভেম্বর তাদেরকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আসামিদের সবার বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংস্থা।

আজ রোববার বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
বর্তমানে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা যাদের ট্র্যাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান, সাবেক সমাজক্যলাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, জুনাইদ আহমেদ পলক, তৌফিক ইলাহী চৌধুরী, সালমান এফ রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, শাহজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, জিয়াউল আহসান, বিচারপতি মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।

এছাড়া আলাদা আরেক আবেদনে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানসহ ছয়জনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ট্র্যাইব্যুনালে হাজিরেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে ২০ নভেম্বর হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
অপর একটি আবেদনে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানসহ ১৭ জন পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তারা হলেন- সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ মামুন, ডিবি হারুন, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, সাবেক ডিএমপি হাবিবুর রহমান, সাবেক র‌্যাব ডিজি হারুন অর রশিদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা তারেক আনাম সিদ্দিকী, বিচারপতি মানিক ড. জাফর ইকবাল, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। বাকিদের নাম তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করেনি প্রসিকিউশন টিম।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের (পুরাতন) মূল ভবনের সংষ্কার কাজ চলমান থাকায় ভবন সংলগ্ন (অস্থায়ী) ট্রাইব্যুনালে আজ বেলা সাড়ে বারোটায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম অন্য মামলায় গ্রেপ্তার থাকা ১৪ জনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ট্র্যাইব্যুনালে হাজিরের আবেদন করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল ১৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আগামী ১৮ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেন। প্রসিকিউশন তিনটি আবেদন পেশ করে।

আদালতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম ও বি এম সুলতান মাহমুদসহ অন্য প্রসিকিউটররা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন নির্মূলে গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রসিকিউশন অফিসে ৭৫টির মতো অভিযোগ জমা পড়ে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা বরাবরও অভিযোগ জমা পড়ছে।

গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আজ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আজ তিনটি আবেদন পেশ করেছি। শুনানি নিয়ে ট্রাইব্যুনাল আদেশ দেন। তিনি আরও বলেন, যাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাদের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তি যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে আমরা সচেতন থাকবো।