নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরে মানুষের যেমন নিরাপত্তা নেই, সীমান্তে কি বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা রয়েছে? এতদিন দেখেছি, বিএসএফের হাতে সাধারণ বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। আর এখন দেখছি, সীমান্তে বিজিবিরও নিরাপত্তা নেই।
রিজভী বলেন, গতকালও যশোর সীমান্তের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট সংলগ্ন এলাকায় বিএসএফের গুলিতে মোহাম্মদ রইসুদ্দীন নামে এক বিজিবি সদস্য নিহত হয়েছেন। অন্য দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আরেকটা স্বাধীন দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী হত্যা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, বরং এটির সঙ্গে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।রিজভী বলেন, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি, শেখ হাসিনার ক্ষমতা লোভের ফলশ্রুতিতে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ আজ তাবেদার রাষ্ট্র। অবৈধ সরকার আজ দেশবিরোধী ঘৃণ্যচক্রান্তের ক্রীড়নক। সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবি পর্যন্ত নিরাপত্তাহীনতায়। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন সরকারের আচরণ এখন আর ‘বন্ধুপ্রতিম’ নয় ‘বন্দুক প্রতিম’। সীমান্তে বিজিবি সদস্য বিএসএফের গুলিতে মারা গেছেন। এর কী জবাব দেবেন শেখ হাসিনা? অথচ এ নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ভয়াবহ সংকটে দেশের অর্থনীতি। সবগুলো ব্যাংক বন্ধের দশা হয়েছে। দেশের ১০-১৫টি ব্যাংক যেকোনো সময় দেউলিয়া ঘোষণা হতে পারে। টাকা নেই সরকারের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ছাপিয়ে ছাপিয়ে টাকা দিচ্ছে। তারপর বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এভাবে টাকা ছাপালে এই টাকা কাগজ হয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতি তলানিতে। দেশে ভয়াবহ ডলার সংকট। এই সংকটে বৈদেশিক মুদ্রা আসার অন্যতম উৎস বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই বাড়েনি। ৯ মাসে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২৪ শতাংশ! ইউরোপ-আমেরিকায় পোশাক রপ্তানিতে ধস নেমেছে। ১১ মাসে আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি ২৫ শতাংশ কমেছে। নজীরবিহীনভাবে খাদ্য-মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে।
এ বিএনপি নেতা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মার্কা ভোট নাটক মঞ্চায়ন করে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। ভোটে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটেছে। কিন্তু কিছু আঁতেল নির্বাচন নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। তিনি বলছেন, ভোটে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটেছে। বাস্তবতা হলো জনগণের মতের প্রতিফলন নয়, সেটা হলো এক ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন একটি অপরাধপ্রবণ অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের ভোট নিয়ে তেলেসমাতি। আর যে কারণে জনগণ একযোগে ভোট বর্জন করেছেন।
তিনি বলেন, মানুষ যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন সেখানে শীতার্ত মানুষ কীভাবে গরম কাপড় জোগাড় করবে? এই মানুষগুলোর ব্যাপারে সরকার উদাসীন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষ মুখ খুললেই তাদের পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি চিহ্নিত সিক্রেট স্টেট পুলিশ তথা গেস্টাপো চক্রকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হামলা-মামলায় জর্জরিত গণতন্ত্রকামী মানুষ।
এদিকে বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমানের (কোকো) মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ওইদিন সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় দলের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, তাহসিনা রুশদির লুনা, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা মো. মুনির হোসেন, আসাদুল করিম শাহীন, আমিনুল ইসলাম, তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।