সুস্থ সেই রাবেয়া-রোকেয়া, ‘অসাধ্য সাধন’ বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৫:৫৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচারের পর বিরল মাথা জোড়া লাগানো জমজ শিশু রাবেয়া ও রোকেয়া অনেকটাই সুস্থ আছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে দেশের কোনো হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সবচেয়ে জটিল ‘জমজ মস্তিষ্ক’ আলাদা করার কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়াকে ‘অসাধ্য সাধন’ হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। একইসঙ্গে তিনি চিকিৎসক দলের চলমান চিকিৎসা নিয়ে সন্তোষের পাশাপাশি অস্ত্রোপচারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরও ভূয়সী প্রশংসা করেন।

রোববার (২৮ এপ্রিল) সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে জোড়া লাগানো জমজ শিশু রাবেয়া ও রোকেয়ার অপারেশন পরবর্তী ফলোআপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, সিএমএইচ হাসপাতালে অসাধ্য সাধন করে রাবেয়া-রোকেয়াকে আলাদা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সাহসে এটি সম্ভব হয়েছে। যতটুকু খোঁজ নিয়েছি, রাবেয়া ভালো আছে তবে রোকেয়ার এখনো কিছু অসুবিধা আছে। ডাক্তারের অবজারভেশনে আছে রোকেয়া।

তিনি বলেন, আমার ভালো লাগে বাচ্চা দুটোকে যখন আমি আলাদাভাবে দেখতে পারি। আমি মনে করি রাবেয়া-রোকেয়ার অপারেশন বাংলাদেশের চিকিৎসার মাইলফলক, যেখানে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসার বেহাল অবস্থা।

রাবেয়া-রোকেয়ার বাবা রফিকুল ইসলাম জানান, মেয়েদের জন্মের পর মন খারাপ ছিল। কিন্তু অপারেশনের পর এক মেয়ের পূর্ণ সুস্থতায় খুশি। তিনি সংশ্লিষ্ট সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানান।

সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, রাবেয়া-রোকেয়ার অসহায় বাবার আর্তনাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে এলে তাদের চিকিৎসার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। দেশিবিদেশি ডাক্তারদের সহযোগিতায় এখনো তাদের চিকিৎসা চলছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মাথা জোড়া লাগানো জমজ শিশু চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিকলতা। ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন জীবিত জমজ শিশুর মধ্যে মাত্র একটি জোড়া মাথার শিশু জন্ম নেয়। প্রায় ৪০ শতাংশ জোড়া মাথার শিশু মৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে এবং আরও এক তৃতীয়াংশ শিশু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে। আনুমানিক শতকরা ২৫ ভাগ শিশু জোড়া মাথা নিয়ে বেঁচে থাকে, যাদের শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে আলাদা করার সুযোগ রয়েছে কিন্তু এর সাফল্যের হারও খুব বেশি নয়।

প্রসঙ্গত, পাবনার চাটমোহর উপজেলার রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগম দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় বিরল দুই মাথা জোড়া লাগানো জমজ সন্তান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় গত ২০১৯ সালের ২২ জুলাই রাবেয়া ও রোকেয়াকে সিএমএইচ ঢাকায় আনা হয়। এরপর ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি এবং ১৩ মার্চ আড়াই ঘণ্টাব্যাপী দুটি অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়। অপারেশন দুটির মাধ্যমে তাদের মাথায় বিদ্যমান ক্ষতস্থান নতুন কোষ দিয়ে পূর্ণ করা হয়।

পরে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে রাবেয়ার মাথার বাম দিকের চামড়ায় ক্ষত শুরু হয় এবং পরে বৃদ্ধি পেয়ে চামড়ার নিচে লাগানো কৃত্রিম মাথার খুলি দৃশ্যমান হয়। এ জটিলতা সমাধানের নিমিত্তে বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সেই বছরের ৭ মার্চ সিএমএইচে আরেকটি সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। ওই অপারেশনে দেশি ও বিদেশি চিকিৎসকসহ শতাধিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অংশগ্রহণ করেন। এরপর থেকে নিয়মিত চিকিৎসায় বর্তমানে রোকেয়া ও রাবেয়া দুজনই সুস্থ আছে।