জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
শরীয়তপুরের জাজিরার ফেদুল্লা বেপারী কান্দি নদীতে সেতু নেই। বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকিতে চলাচল করছে আশপাশের অন্তত ১৫টি গ্রামের লোকজন। এতে সময় নষ্টের পাশাপাশি ব্যয় বেড়েছে কৃষিপণ্য পরিবহনে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার জনপ্রতিনিধিরা সেতু তৈরির অশ্বাস দিলেও নেওয়া হয়নি কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। তবে সেতু নির্মাণের জন্য সমীক্ষা চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী।
উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের ফেদুল্লা বেপারি কান্দির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটি পদ্মার শাখা নদী। দীর্ঘ ছয় কিলোমিটার নদীটি জাজিরা প্রান্তে গিয়ে ভরাট হয়ে গেছে। তবে সবসময় পানি থাকে নদীতে। নদীর ওপর দিয়ে পালেরচর, পূর্ব নাওডোবা, বড় কান্দি, কুণ্ডেরচর, মাঝিরচর ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষের যাতায়াত।
এ অঞ্চলের বাসিন্দারা খালটি পার হয়ে পশ্চিম পাড়ে রূপবাবুর হাট, জাজিরা উপজেলা ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। শিক্ষার্থীরা জাজিরা ডিগ্রি কলেজ, পূর্ব নাওডোবা পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, কিন্ডার গার্টেন, মহিলা মাদরাসা, সরকারি বি কে নগর বঙ্গবন্ধু কলেজে যাতায়াত করেন। তিন বছর আগে স্থানীয় মন্টু বেপারীর উদ্যোগে ৩০০ মিটার একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়। ভরা বর্ষা মৌসুমে নদী পারাপারে খেয়া নৌকা চলাচল থাকলেও পানি কমে গেলে সবার একমাত্র ভরসা আধা ভাঙাচোরা বাঁশের সাঁকোটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাঁকোটি দীর্ঘদিনের হওয়ায় অধিকাংশ জায়গায় বাঁশ পচে গেছে। কয়েক জায়গায় মাঝখানে ফাঁকা হয়ে গেছে। মানুষ চলাচল করলে নড়বড়ে সাঁকোটি দুলতে থাকে। কয়েকটি স্থানের হাতলের বাঁশ ভেঙে পড়ে গেছে।
ফেদুল্লা বেপারী কান্দি এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বেপারী। তিনি ছোটবেলা থেকেই এমন ভোগান্তি নিয়ে বড় হয়েছেন। জানতে চাইলে আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘সারাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু আমরাতা বিশ্বাস করতে পারি না এই সাঁকোটির জন্য। আমরা পূর্বপাড়ের ৫০ হাজার মানুষ পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করতে পারছি না। আমরা একটি সেতুর অভাবে এখনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপেই রয়ে গেছি।’
নদীর পূর্বপাড় এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম বেপারী। তিনি তার বাড়িতে গরুর খামার তৈরি করেছেন। তবে সেতু না থাকায় অনেক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তিনিও।আব্দুস সালাম বেপারী বলেন, ‘এই নদী দিয়ে গরু পারাপারে চিন্তায় থাকি। আমাদের ভীষণ কষ্ট হয়। এতো কষ্ট করে গরু লালন-পালন করে বড় করি। কিন্তু এ গরু ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করতে পারি না। গ্রামেই অল্প দামে বিক্রি করে দিতে হয়।’
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাকে নিয়ে যাতায়াত করেন গৃহবধূ সোনালী নূর। তিনি বলেন, ‘বাচ্চাকে নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। ওকে একা ছাড়তে ভয় লাগে যদি সাঁকো ভেঙে নিচে পড়ে যায়। এখানে যদি একটি সেতু থাকতো তাহলে আমাদের এতো কষ্ট হতো না।’
শিক্ষার্থী স্নেহা আক্তার বলে, ‘আমাদের সাঁকো পাড় হতে ভীষণ ভয় লাগে। কিছুদিন আগেও আমার এক বন্ধু সাঁকো ভেঙে নিচে পড়ে গিয়ে বইখাতা সব পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়।’স্থানীয় ইউপি মেম্বার আব্দুল মান্নান চৌকিদার বলেন, সেতু না থাকায় আমাদের অনেক দুর্ভোগ। অনেক সময় দেখা যায় নদী পারাপারের আগেই পথে রোগী মারা যায়। গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে।
বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করেছেন খেয়া ঘাটের মাঝি মন্টু মিয়া। তিনি বলেন, মানুষ নৌকার আশায় অনেক সময় নদীর পাড়ে বসে থাকে। ঝড়বৃষ্টির মধ্যে যাতায়াতে তাদের ভীষণ কষ্ট হয়। আমাকেও মধ্যরাতে ঘুমের মধ্যে মোবাইল ডেকে নিয়ে আসে। তাই নদীর ওপারের মানুষদের রাত বিরাতে যাতায়াতের কথা চিন্তা করে তিন বছর আগে স্থানীয়দের কাছ থেকে সাহায্য উঠিয়ে বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) জাজিরা উপজেলা প্রকৌশলী ইমন মোল্লা বলেন, ওই জায়গায় একটি সেতু নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আমরা ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছি। ২০২১ সালে সেতুটির ডিজাইন তৈরি করার পর যখন আমরা ফিল্ডে কাজ করতে যাই তখন দেখা যায়, সেতুর উচ্চতা বিআইডব্লিউটিএ থেকে যতটুকু নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে সংযোগ সড়কটি আমরা মেলাতে পারছি না। এতে বাজারের দোকানগুলো মাটির নিচে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। পরে ডিজাইন পরিবর্তন করে নতুন একটি ডিজাইন করা হচ্ছে। ডিজাইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ওখানে সেতু তৈরির কাজ শুরু করা হবে।