সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর পর চলে গেলেন মা আঁখিও

প্রকাশিত: ৫:৫২ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২৩

মো. সাইফুল ইসলাম:
রাজধানীর গ্রীন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় নবজাতকের মৃত্যুর পর এবার মারা গেলেন মৃত্যুঝুঁকিতে পড়া শিশুটির মা মাহবুবা রহমান আঁখি। ওই হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে থেকে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আজ রোববার (১৮ জুন) দুপুরের দিকে নিউজ পোস্ট বিডিকে এ তথ্য জানিয়েছেন নিহতের স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিউজ পোস্ট বিডিকে বলেন, গাইনী বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে প্রসব ব্যাথা ওঠায় আমার স্ত্রীকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করি। নবজাতকের সন্তানের জীবিত দেহ কোলে তোলার আগেই তার মৃত্যুর সংবাদ আমাকে ব্যাথিত করে তোলে। একই সঙ্গে সন্তানের মরদেহ হাতে নেওয়ার মুহুর্তেই শুনতে হয় আমার স্ত্রী মৃত্যুঝুঁকিতে। তাকে বাঁচাতে জরুরি লাইফ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়ে ওঠে। তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর কর্তব্যরত চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার কারণেই আমি আমার স্ত্রী-সন্তানকে হারালাম। এখন আর সব শেষ হয়ে গেছে। আমি এখন নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমার এখন আর কিছুই বলার নেই। এর বিচারের দায়ভার আমি সরকার তথা জনগণের হাতে ছেড়ে দিলাম।


এর আগে গত বুধবার (১৪ জুন) সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় মাহবুবা রহমান আঁখি নামের এক প্রসূতি মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন বলে অভিযোগ করেন তার স্বামী ইয়াকুব আলী। তিনি দাবি করেন, অতি মুনাফালোভী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মারা গেছেন তাদের নবজাতক সন্তান। এ ঘটনায় ওই দিনই ধানমন্ডি থানায় মোট ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনকে আসামি করে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগ এনে মামলা করেন ইয়াকুব আলী। এরপরই ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে গ্রেফতার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। তাদের গ্রেফতারের পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিেেস্ট্রটের আদালতে তোলেন। বিজ্ঞ আদালত শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সেই থেকে দুই ডাক্তার কারাবন্দি থাকলেও অন্যান্য আসামিরা এখনো অধরাই রয়ে গেছেন। বিষয়টি দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সেন্ট্রাল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের অস্ত্রপোচারসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এমন বাস্তবতায় দুইজন ডাক্তারকে বন্দি রাখায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসক সমাজের জন্য দেশের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিএমএ নেতৃবৃন্দ।


জানা গেছে, গত তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী গৃহবধূ মাহবুবা রহমান আঁখি। এমনকি তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল বলেও চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই সন্তান প্রসব সম্ভব বলে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা। প্রসব ব্যথা ওঠায় গত ৯ জুন রাত ১২টা ৫০ মিনিটে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তার অধীনে মাহবুবাকে ভর্তি করানো হয়। তখন ডা. সংযুক্তা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, সংযুক্তা সাহা আছেন এবং ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) কাজ করছেন।
আঁখির স্বজনরা জানান, সেসময় এই চিকিৎসক হাসপাতালে ছিলেন না। খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারেন, প্রসূতির অবস্থা যখন জটিল, তখন ডা. গংযুক্তা সাহা ছিলেন দুবাইতে। চিকিৎসক না থাকার পরও তার অধীনে রোগী ভর্তি করা হয়। এরপর ডেলিভারির চেষ্টা ও পরবর্তীতে সফল না হওয়ায় সিজার করে বাচ্চা বের করে আনা হয়। সিজারের পরদিন মারা যায় বাচ্চাটি। অবশেষে বাচ্চাটির মা ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী মাহবুবু রহমান আঁখিও মারা গেলেন।
ধানমন্ডি থানা পুলিশ বলছে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ মামলার অন্যান্য অভিযুক্তকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।