স্কুল-মার্কেট ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠছে নারী পকেটমারচক্র

প্রকাশিত: ৯:০৮ অপরাহ্ণ, জুন ১৪, ২০২৩

এসএম দেলোয়ার হোসেন:
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যস্ততম শহরে ক্রমেই সক্রিয় হয়ে উঠছে। মূল হোতাদের দিক-নির্দেশনায় ব্যস্ততম শপিংমল, স্কুল-কলেজের গেট ও বাসস্ট্যান্ড ঘিরে গড়ে তুলছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওদের টার্গেট নারী-পুরুষের ভ্যানিটি ব্যাগ ও মানিব্যাগ। সুযোগ সন্ধানী এসব নারীরা নানা কৌশলে শপিংমলে কেনাকাটা করতে আসা এবং স্কুল কলেজের গেটে অপেক্ষায় থাকা নারী-পুরুষের ভ্যানিটি ব্যাগ ও মানি ব্যাগ থেকে নগদ অর্থ এবং মোবাইল সেট হাতিয়ে নিয়ে দ্রæত সটকে পড়া। এরআগে পুলিশের নজরে পুরুষ পকেটমার চক্র ধরা পড়লেও এবার নারী পকেটমারের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। বাচ্চা কোলে নিয়ে এরা হাসপাতাল, স্কুল-কলেজের সামনে, শপিং মলে ঘুরে বেড়ায়। সুযোগ পেলেই নারীদের ব্যাগ থেকে তুলে নেয় মোবাইল ফোন। এমনই সংঘবদ্ধ পকেটমার চক্রের সক্রিয় ৯ নারী সদস্যসহ আরও ৭ জন মূল হোতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে চুরি করা বিপুল সংখ্যক চোরাই মোবাইল সেট উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. মাহাবুব হোসেন (৩২), মো. মোক্তার হোসেন (৪০), রফিকুল ইসলাম (৪২), মো. ইমরান হোসেন (২০), বর্ষা আক্তার ওরফে মীম (২২), সুমি আক্তার প্রিয়া (২৩), শাবনুর (২৭), আলেয়া ওরফে আলো (২১), সাথী আক্তার (২৬), ছৈয়দ হালদার (৪০), মো. আশরাফ ঢালী (৩৮), মো. জাকির হোসেন (৩৯), ১৩. মোছা. ছকিনা বেগম (৪৩), সুজনা আক্তার ওরফে সুজিনা আক্তার ওরফে রুশকিনা (২৬), মোসা. তানিয়া খানম (২৭), তাসলিমা খাতুন (৩৭)।

আজ বুধবার (১৪ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান। আজ বুধবার (১৪ জুন) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান।
তিনি জানান, গতকাল মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাজধানীর পুরান ঢাকার আজিমপুরের পিলখানা রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের (আজিমপুর শাখা) মেইন গেটের বিপরীত পাশে এবং গুলিস্তান এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (লালবাগ বিভাগ) উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, নারী পকেটমার চক্রের সদস্যরা কখনও বোরকা পরা পর্দানশীল হয়ে থাকেন, আবার কখনও বাচ্চা কোলে স্নেহময়ী মা। পর্দানশীল মায়ের পরিচয়ে মুহূর্তেই ঢুকে যায় মানুষের ভিড়ের মাঝে। চোখের পলকে নারী ও পুরুষের পকেট বা ব্যাগ কেটে চুরি করে নগদ টাকা, মোবাইল এবং ব্যাগে রাখা স্বর্ণালংকার। তারা দ্রুত এসব বিক্রি করে দেয় মূল হোতাদের কাছে। লাখ টাকার একটি ঝকঝকে আইফোনের জন্য মূল হোতা তাদের দেয় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। তিনি আরও বলেন, এক সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়- রাজধানীর একটি শপিং মলে এক মহিলার ব্যাগ থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা নিয়ে দ্রুত কেটে পড়ছে আলেয়া নামের এক ছদ্মবেশের নারী পকেটমার। ১০ বছর বয়স থেকে সে মোবাইল চুরির কাজে যুক্ত হয়।


ডিবির ডিসি মশিউর রহমান বলেন, তারা একটি অভ্যাসগত ও সংঘবদ্ধ চোর দলের সক্রিয় সদস্য এবং দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা মহানগরের নিউমার্কেট, আজিমপুরসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, স্কুল-কলেজ, মার্কেট ও হাসপাতালে বিশেষ কৌশলে ভ্যানিটিব্যাগ বহনকারী মহিলাদের ব্যাগের চেইন খুলে এবং পুরুষদের শার্ট-প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল ও নগদ টাকা চুরি করে থাকে। লালবাগ থানাধীন আসামি মো. মাহাবুব হোসেন, মো. মোক্তার হোসেন, রফিকুল ইসলাম ও মো. ইমরান হোসেনসহ আরও কয়েকজন চুরি করার কাজে কখনও কখনও সরাসরি অংশ নেয় এবং এই চোরাই মোবাইল বিক্রি করে চোরদের মধ্যে টাকা ভাগবাটোয়ারা করে দেয়। গ্রেফতারকৃত আসামিরা, পলাতক আসামি এবং তাদের আরও ৪-৫ জন সহযোগী আশপাশের এলাকায় মোবাইল চুরি করে এবং চোরাই মোবাইল বিক্রয় করার জন্য ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়।
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, একইভাবে শাহবাগ থানাধীন আসামিরা ঢাকা মহানগরের গুলিস্তান, গোলাপশাহ মাজার, ফুলবাড়ীয়াসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, স্কুল-কলেজ, মার্কেটে ও হাসপাতালে বিশেষ কৌশলে ভ্যানেটিব্যাগ বহনকারী মহিলাদের ব্যাগের চেইন খুলে এবং পুরুষদের শার্ট-প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল ও নগদ টাকা চুরি করে থাকে। এই চোর চক্রে তাদের আরও ২-৩ জন সহযোগী আছে। আসামি ছৈয়দ, আশরাফ ও জাকিরসহ আরও কয়েকজন চুরি করার কাজে কখনও কখনও সরাসরি অংশ নেয় এবং এই চোরাই মোবাইল বিক্রি করে চোরদের মধ্যে টাকা ভাগবাটোয়ারা করে দেয়। গ্রেফতার আসামি, পলাতক আসামি এবং তাদের আরও ২-৩ জন সহযোগী আশপাশের এলাকায় মোবাইল চুরি করে এবং চোরাই মোবাইল বিক্রয় করার জন্য ঘটনাস্থল গোলাপশাহ মাজারের আশপাশের এলাকায় অবস্থান করে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির মশিউর রহমান বলেন, রাজধানীতে নারী পকেটমারের সংখ্যা কত সেটা আমরা এখনও জানতে পারিনি। তবে তাদের দেওয়া তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ২০-২৫ জনের নাম জেনেছি।

রাজধানীতে অনেক মানুষই রয়েছে যারা মোবাইল ফোন হারিয়ে গেলে জিডিও করেন না। আমরা যে ৪০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছি তার মধ্যে একটি মোবাইল ফোনের জিডি রয়েছে। মোবাইল হারিয়ে গেলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা।

মশিউর রহমান বলেন, গত ১৭ এপ্রিল একজন অ্যাডিশনাল ডিসট্রিক্ট জাজের স্ত্রী নিউমার্কেট থেকে রিকশায় করে ইডেন মহিলা কলেজে যাওয়া পথে কোনো এক পর্যায়ে তার ব্যাগ থেকে হারিয়ে ফেলেন আই-ফোনটি। ফোনটি উদ্ধার করে ডিবি। গত ২ মে একজন সিনিয়র সাংবাদিকের স্ত্রী তার সন্তানকে স্কুল থেকে আনার জন্য যান আজিমপুরের ভিকারুননিসা নূন স্কুলে। স্কুলের গেটে হঠাৎ দেখেন তার ব্যাগের চেইন খোলা; মোবাইলটি নেই। ১৪ মে ডিবি পুলিশ উদ্ধার করে দেয় আই-ফোনটি। দুটি ফোন উদ্ধারের পর নারী পকেটমারদের সন্ধান পায় তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবির সদস্যরা। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নারী পকেটমার চক্রের অপর সদস্য ও তাদের ইন্ধনদাতা মূল হোতাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান ডিএমপির (ডিবি) লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান।