স্ত্রীকে হত্যা করে বালি চাপা: লাশ গুম করতে এসআইকে ১৫ লাখ টাকা প্রদান ও সপরিবারে কানাডায় নেওয়ার প্রস্তাব

প্রকাশিত: ৮:৪৩ অপরাহ্ণ, জুন ১, ২০২৩

এসএম দেলোয়ার হোসেন: রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে আফরোজা আক্তার (৪২) নামে কানাডা প্রবাসী এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (৩১ মে) রাত ১১টার দিকে এলাকার সাহেব বাড়ির মোড়ে কানাডা প্রবাসী আশরাফুল আলমের বাড়ি থেকে মরদেহটি বালি চাপা দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, কানাডা থেকে ফোন করে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজিয়া খাতুনকে লাশ উদ্ধার করে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার জন্য ১৫ লাখ টাকা ও পরিবারসহ কানাডায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন নিহতের স্বামী আশরাফুল আলম। পরে তার দেওয়া তথ্যে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
দক্ষিণখান থানার এসআই রাজিয়া খাতুন বলেন, গত ২৯ মে নিহতের ভাই আরিফুল ইসলাম তার বোন আফরোজা আক্তার নিখোঁজের ঘটনায় দক্ষিণখান থানায় একটি জিডি করেন। ঘটনার পর থেকে বিষয়টি আমি তদন্ত শুরু করি। আমি কয়েক দফায় আফরোজা আক্তার ও তার স্বামীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলি। আশরাফুল আলমের পরিবার জানায়, ছুটি শেষ হওয়ায় সে কানাডায় চলে গেছে। কিন্তু কোনোভাবেই আফরোজা আক্তারের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর তাদের প্রতি আমার সন্দেহ বাড়তে থাকে। পরে আমি নিহতের শ্বশুরের কাছে আফরোজার মোবাইলের বিষয়ে জানতে চাই। তিনি বলেন, মোবাইল আমার ছেলে নিয়ে চলে গেছে। এতে আমার সন্দেহ আরও বাড়তে থাকে।

এসআই রাজিয়া খাতুন বলেন, কানাডায় যাওয়ার সময় আফরোজার সন্তান অন্বেষাকে নিয়ে যান আশরাফুল আলম। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আশরাফুল আলমের বাবা আফরোজার ভ্যানিটি ব্যাগ বের করে দেন। ব্যাগ খুলে পাসপোর্ট, ওয়ার্ক পারমিট ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সবকিছুই পাওয়া যায়। বিষয়টি আমি একাই তদন্ত করছিলাম। একপর্যায়ে নিহতের খালা শাশুড়ির ফোন দিয়ে কানাডা থেকে আমার সঙ্গে কথা বলতে চায় আশরাফুল আলম। তাদের অঙ্গভঙ্গিতে অনেক কিছুই আমি আঁচ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু তাদের কিছুই বুঝতে দেইনি। বলেছি আপনাদের কিছুই হবে না বিষয়টি আমি দেখব। এতেই আমার ওপর তাদের আস্থা অনেক বেড়ে যায়।

এসআই রাজিয়া খাতুন বলেন, কানাডা থেকে আশরাফুল আলম তার খালার মোবাইল দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমার সঙ্গে কথা বলেন। তখন আমার মোবাইল দিয়ে আমি সবকিছু রেকর্ড করছিলাম। সে আমাকে বলে, আপনার পরিবারে কে কে আছে আমি ২৫ লাখ, ২৫ লাখ মোট ৫০ লাখ টাকা দিয়ে দু’জনকে কানাডায় নিয়ে আসব। আপনাকে নগদ ১৫ লাখ টাকা দেব। আপনি এই লাশ উদ্ধার করে বুড়িগঙ্গায় নিয়ে ফেলে দেবেন। কেউ যেন কিছু বুঝতে না পারে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আশরাফুল আলম কানাডা থেকে আমাকে বলেন, আপনি ভিডিও কলে আসেন লাশ কোথায় আছে আমি দেখিয়ে দিচ্ছি। তখন আমার সঙ্গে কেউ ছিল না। আমি ভিডিও কল অন করি। আশরাফুল আমাকে ভিডিও কলে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। তখনও আমার মোবাইল দিয়ে ভিডিও করছিলাম। এরপর আশরাফুল আমাকে বলেন গেট থেকে বের হয়ে বাম দিকে যেতে। এরপর আমি এগোতে থাকি, ঠিক তখনই আশারাফুল বলেন, এখানেই দাঁড়ান। তারপর বলেন, এখানেই আফরোজাকে মেরে পুঁতে রেখেছি। আমি কিছুটা বালি খুঁড়তেই আফরোজার দেহের অংশ দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে আমি সিনিয়র অফিসারকে জানাই। থানা থেকে আমাদের টিম পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে। এরপর সিআইডির ক্রাইম সিনকে খবর দেওয়া হয়।

আফরোজাকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার মাথায়, গলায়, মুখে ও হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। হত্যার পর চাদরে মুড়িয়ে গর্ত করে বালুর নিচে চাপা দিয়ে কানাডায় চলে যায় স্বামী আশরাফুল আলম।

এসআই রাজিয়া খাতুন বলেন, পরিবারের প্রত্যেকটি লোক অস্বীকার করেছে, বলেছে তারা কিছু জানে না। অথচ তাকে পাশের রুমে হত্যা করে চাদর দিয়ে বালুর নিচে চাপা দিয়ে দিল, এটি কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। একটা মানুষকে একাই হত্যা করল, আবার তাকে একাই নিয়ে গর্ত করে চাপা দিয়ে দিল। আবার বাসায় রক্তেরও কোনো চিহ্ন নেই। এটা কীভাবে সম্ভব।

তিনি বলেন, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আমরা আশরাফুল আলমের বাবা, ভাই, খালাসহ মোট ৬ জনকে আটক করেছি। নিহতের বড় ভাই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে দক্ষিণখান থানা একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মরদেহটি রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে আফরোজার হত্যাকান্ডের বিস্তারিত কারণ বলা যাবে বলেও জানান এসআই রাজিয়া খাতুন।