হবিগঞ্জে সড়ক অবরোধ করে চা-শ্রমিকদের সমাবেশ
ছয় সপ্তাহ ধরে বেতন বন্ধ
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
হবিগঞ্জে প্রতিনিধি:
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) ১২টি চা-বাগানের কারখানার উৎপাদন গত এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। এ কোম্পানির সাড়ে ১১ হাজার শ্রমিকের বেতন-ভাতা দিতে না পারার কারণে শ্রমিকেরা কাজে যোগদান করছেন না। তাঁরা বেতন পাওয়ার দাবিতে এখন রাজপথে আন্দোলন করছেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে হবিগঞ্জের পাঁচটি চা–বাগানের কয়েক হাজার শ্রমিক চুনারুঘাট উপজেলার ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কের ছড়িছড়া এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। এতে প্রায় ২ ঘণ্টা মহাসড়কে সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ ছিল।
সমাবেশে শ্রমিকেরা জানান, তাঁরা গত ৬ সপ্তাহ ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। চা-বাগান কর্তৃপক্ষও তাঁদের বকেয়া বেতন পরিশোধের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট জবাব দিচ্ছেন না।
এনটিসি সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জ জেলায় ৫টি ও মৌলভীবাজার জেলায় ৭টিসহ এনটিসির ১২টি চা–বাগান রয়েছে। এ বাগানগুলোতে সাড়ে ১১ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বাগানের ৫১ ভাগ শেয়ার সরকারের অন্তর্ভুক্ত। অপর ৪৯ ভাগ শেয়ার ব্যক্তিমালিকানায় বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য ১০ সদস্যের পরিচালনা বোর্ড রয়েছে। বিগত সরকারের আমলে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় কমিটির সদস্যদের অনেকেই আত্মগোপন করেছেন। এতে কার্যক্রম ভেঙে পোয় বর্তমান সরকার নতুন পরিচালনা বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। ১০ সদস্যের মধ্যে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, সাধারণ বিমা করপোরেশন ও আইসিবিসহ রাষ্ট্রের ৪ প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ পরিচালক (যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার) মনোনয়ন দেয়। এ ১০ সদস্যের মধ্যে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করলেও আরও ৩ জন সদস্য এখনো মনোনয়ন কাজ শেষ হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। যে কারণে এ বাগান পরিচালনার ক্ষেত্রে বর্তমানে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চা-শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে গত ৬ সপ্তাহ ধরে।
বকেয়া বেতনের দাবিতে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে চুনারুঘাট উপজেলার ঢাকা–সিলেট পুরাতন মহাসড়কের চন্দ্রিছড়া এলাকায় ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন হবিগঞ্জের পাঁচটি চা-বাগানের কয়েক হাজার শ্রমিক জড়ো হন। এ সময় তাঁরা বকেয়া বেতনের দাবিতে নানা স্লোগান দেন।
সেখানে চন্দ্রিছড়া চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রঞ্জিত কর্মকারের সভাপতিত্বে এ প্রতিবাদ সভায় চা-শ্রমিক নেতারা ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) নানা অনিয়ম তুলে ধরেন। এতে বক্তব্য দেন চা-শ্রমিক অনিমা বাউরি, জয়ন্তি বাউরি, সাধন মৃধা, লস্মন মুন্ডা প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, কোম্পানিটি চা উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করলেও ভেতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির কারণে চা-শ্রমিকেরা তাঁদের বেতন পাচ্ছে না। মালিকপক্ষ কথা দিয়েছিল গত বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাঁদের বকেয়া পরিশোধ করবেন। কিন্তু ওই দিন বেতন দেওয়া হয়নি।
বেলা ১টার পর শ্রমিকেরা তাঁদের কর্মসূচি শেষ করেন। চা–শ্রমিক নেতা রঞ্জিত কর্মকার বলেন, ঊর্ধ্বতনরা গত সরকারের আমলে অনেক অনিয়ম করে কোম্পানিকে লোকসানের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন তাঁরা শ্রমিকদের বেতন নিয়ে খেলা করছেন। বকেয়া বেতন না পাওয়া পর্যন্ত শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেবেন না।
এ বিষয়ে এনটিসির মালিকানাধীন ১২টি চা–বাগানের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মহাব্যবস্থাপক (জিএম) কাজী এমদাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এনটিসির পরিচালনা বোর্ডের পুনর্গঠন কাজ চলছে। এ কাজ শেষ না হওয়ার কারণে কৃষি ব্যাংক থেকে তাঁরা অর্থ গ্রহণ করতে পারছেন না। যে কারণে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা গত ৬ সপ্তাহ ধরে বন্ধ আছে। আশা করা যায় শিগগিরই পরিচালনা বোর্ড গঠন কাজ শেষ হবে। তখন হয়তো এ সমস্যা আর থাকবে না।