হামাসের সঙ্গে চুক্তির দাবিতে ইসরায়েলে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা সাড়ে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
তবে এরপরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে আটক থাকা বেশিরভাগ বন্দিকেই উদ্ধার করতে পারেনি ইসরায়েল। এই পরিস্থিতিতে হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির দাবিতে তেল আবিবে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে।এর পাশাপাশি তারা ইসরায়েলে এখনই নির্বাচন আয়োজনের দাবিও তুলেছেন। রোববার (২৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে তেল আবিবের প্রাণকেন্দ্র কাপলান স্কোয়ারে হাজার হাজার ইসরায়েলি বিক্ষোভ করেছেন। এসময় তারা হামাসের সাথে বন্দি বিনিময় চুক্তির দাবি জানান বলে শনিবার ইসরায়েলি সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।বিক্ষোভকারীরা গাজায় আটক থাকা কয়েক ডজন ইসরায়েলি বন্দির ছবি নিয়ে সমাবেশে অংশ নেয় এবং ‘এখনই নির্বাচন’ বলে স্লোগান দেয়।
একই সময়ে প্রায় ৩০০ জন বিক্ষোভকারী তেল আবিবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর সংলগ্ন বিগিন স্ট্রিট বন্ধ করে দেয় বলে ইয়েদিওথ আহরনোথ সংবাদপত্র জানিয়েছে। এসময় তারা ‘১৬৯’ লেখা একটি ব্যানার সামনে তুলে ধরে, যা চলমান যুদ্ধের দিনগুলোর সংখ্যা নির্দেশ করে।
ধারণা করা হচ্ছে, নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের গতি পরবর্তীতে আরও বৃদ্ধি পাবে এবং অন্যান্য এলাকা ও শহরেও ছড়িয়ে পড়বে।ফিলিস্তিনি সরকারি সূত্র অনুসারে, ইসরায়েল তার কারাগারে কমপক্ষে ৯ হাজার ১০০ জন ফিলিস্তিনিকে বন্দি করে রেখেছে। অন্যদিকে গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলি বন্দির সংখ্যা অস্পষ্ট রয়ে গেছে, কারণ হামাস তাদের সংখ্যা প্রকাশ করতে অস্বীকার করেছে।
ইসরায়েলি মিডিয়া ২৪০ থেকে ২৫৩ ইসরায়েলি বন্দির গাজায় আটক থাকার কথা বলে থাকে। যার মধ্যে তিনজনকে ইসরায়েল মুক্ত করেছিল এবং ১০৫ জনকে হামাস গত বছরের নভেম্বরে বন্দি বিনিময় চুক্তির সময় মুক্তি দিয়েছিল। এছাড়া ইসরায়েলি হামলার কারণে আরও ৭০ জন বন্দির নিহত হওয়ার কথা বলে থাকে হামাস।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ কোনও ধরনের আশ্রয় ছাড়াই বসবাস করছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ত্রাণবাহী ট্রাক এই অঞ্চলে প্রবেশ করছে।ইসরায়েল গাজার ওপর ব্যাপকভাবে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। এর ফলে এই ভূখণ্ডের জনগোষ্ঠী বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা অনাহারের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৪ হাজারের বেশি মানুষ।এছাড়া ইসরায়েল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে এই আদালতের দেওয়া এক অন্তর্র্বতীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।