মোঃ সাইফুল ইসলামঃ
দেশের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে ‘নমুনা ডিম’ ছেড়েছে কার্প জাতীয় মা মাছ। হালদা নদীতে প্রজনন মৌসুমে ডিম ছাড়ার আগে নমুনা ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মা মাছ। নমুনা ডিম দেখে নদী পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা পুরোদমে ডিম সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন।
মঙ্গলবার (৭ মে) সকাল ৬টার সময় ভাটার শেষের দিকে হালদা নদীর রাউজান অংশের মইশকরম এলাকার চইল্যাখালি এলাকায় মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়ে।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, মঙ্গলবার স্বল্প পরিসরে ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় মা মাছ। জেলেরা ১১টি নৌকার মাধ্যমে ডিম সংগ্রহ করেন। প্রতিটি নৌকায় গড়ে দুই থেকে আড়াই বালতি করে ডিম সংগ্রহ করেন। চলতি মাসের ৬ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত হালদায় কার্প জাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার অমাবস্যার জোঁ চলছে বলেও জানান তিনি।
ডিম সংগ্রহকারী হরিরঞ্জন দাশ জানান, ভোরের দিকে কিছু ডিম পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত তিন বালতির মতো ডিম পেয়েছি। গতকাল বৃষ্টি হওয়ার কারণে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মা মাছ ডিম ছাড়তে অনুকূল পরিবেশ পায়নি। রাতের জোয়ার শেষে ভাটায় মা মাছ ডিম ছেড়েছে। আশা করি আরও ডিম সংগ্রহ করতে পারব।
এদিকে নমুনা ডিম ছাড়ার পরপরই হালদায় নৌকা ভাসিয়ে ডিম ছাড়ার অপেক্ষায় আছেন সংগ্রহকারীর। সকাল থেকে হালকা রোদ ও মেঘলা থাকায় বৃষ্টির অপেক্ষায় আছেন তারা। বৃষ্টি হলেই ডিম সংগ্রহ উৎসব শুরু হবে বলে তাদের আশা।জানা গেছে, হাটহাজারীর নয়াহাট, মদুনাঘাট, গড়দোয়ারা, মাছুয়াঘোনা, মাদার্শাসহ বিভিন্ন এলাকায় তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ নৌকা নিয়ে পাঁচ শতাধিক সংগ্রহকারী অপেক্ষা করছেন।
রাউজানের পশ্চিম গহিরা অংকুরী ঘোনা, পশ্চিম গহিরা বড়ুয়াপাড়া, দক্ষিণ গহিরা, গহিরা মোবারক খীল, গহিরা জামতল, পশ্চিম বিনাজুরী, কাগতিয়া, আজিমের ঘাট, মগদাই, নাপিতের ঘাট, পশ্চিম আবুর খীল, খলিফার ঘোনা, সার্কদা মোকামীপাড়া কচুখাইন ও উরকিরচরে বসবাসকারী ডিম সংগ্রহকারীরাও নৌকা ও জাল নিয়ে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদী বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে ঘোষিত। হালদা যেখানে কর্ণফুলীর সঙ্গে মিশেছে, সেই কালুরঘাট সেতুর কাছের অংশ থেকে উজানে মদুনাঘাট হয়ে নাজিরহাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশে নদীর দুই তীরে হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি এই তিন উপজেলা।
মদুনাঘাট থেকে সমিতির হাট পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে হাটহাজারি এবং রাউজান উপজেলা সংলগ্ন অংশেই মেলে নিষিক্ত ডিম। এই অংশেই মা মাছের আনাগোনা বেশি হয়।নদীতে মা মাছের ছাড়া নিষিক্ত ডিম বিশেষ ধরনের জাল দিয়ে সংগ্রহ করেন ডিম সংগ্রহকারীরা। পরে হ্যাচারিতে রেণু তৈরি করা হয়।