
কক্সবাজার প্রতিনিধি:
২০২২-২৩ অর্থবছরে কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা বিট এলাকায় ৫১০ হেক্টর বনভূমিতে নতুন বাগান তৈরির জন্য বরাদ্দ হলেও বাস্তবে মাত্র ১৬০ হেক্টরে বনায়ন হয়েছে। একইভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৩৬২ হেক্টর বনায়ন প্রকল্পেও একই ধরনের অনিয়ম হয়েছে।
এসব এলাকায় চারা রোপণের নামে বরাদ্দকৃত বড় অংশের টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। অনেক জায়গায় সাইনবোর্ড পাওয়া গেলেও গাছের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অনেক স্থানে পরিচর্যার অভাবে রোপিত চারাগুলোর বেশিরভাগই মারা গেছে।
শত কোটি টাকার বন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে পদে পদে এমন দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত সোমবার দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই অভিযানের এনফোর্সমেন্ট টিমের দাখিলকৃত অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্তারুল ইসলাম বলেন, বন বিভাগের নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগে একযোগে পরিচালিত দুটি অভিযানসহ দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিট হতে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৃথক অভিযান চালানো হয়েছিল। আজ টিম কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
দুদক জানায়, বন অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম, বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ, বদলি ও পদোন্নতিসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে এনফোর্সমেন্ট ইউনিট ২৪ ফেব্রুয়ারি বন ভবনে অভিযান পরিচালনা করে। দুদকের এই অভিযান পরিচালনা করেন সহকারী পরিচালক মো. ইসমাঈলের নেতৃত্বাধীন এনফোর্সমেন্ট টিম। অভিযানের সময় প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী, উপপ্রধান বন সংরক্ষক এবং টেকসই বন ও জীবিক (সুফল) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক গোবিন্দ রায়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়।
অভিযান শেষে আজ (২৬ ফেব্রুয়ারি) প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরীর অধীনে প্রশাসনিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার অভাব রয়েছে। বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতার অভাবে গুরুতর অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয়িত অর্থের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের বিষয়ে তিনি কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
এছাড়া তার তত্ত্বাবধানে বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসে। নির্ধারিত নীতিমালা উপেক্ষা করে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি ও নিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদক জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম এতটাই প্রকট যে, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়িত্বশীলতার সংকট দেখা দিয়েছে। বদলি ও পদায়ন নীতিমালার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির বিস্তারের ফলে বন অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলি ও পদোন্নতি ‘বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলি সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০০৪’ অনুসারে হওয়ার কথা থাকলেও, এটি অনুসরণ করা হয়নি। বিভিন্ন বন বিভাগের রেঞ্জ ও স্টেশন পোস্টিংয়ে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বদলি ও পদায়নের তথ্য পাওয়া গেছে, যেখানে প্রধান বন সংরক্ষকের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে।
এছাড়াও, টেকসই বন ও জীবিক (সুফল) প্রকল্পের অধীনে গত দুই অর্থবছরে ৮৭২ হেক্টর নার্সারি ও বনায়ন করার পরিকল্পনা থাকলেও, তদন্তে দেখা গেছে, উল্লেখযোগ্য অংশে কোনো বনায়ন করা হয়নি। কিছু এলাকায় শুধু সীমানা নির্ধারণের জন্য সামান্য চারা লাগানো হয়েছে। অভিযানের মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে।