ক্রীড়া ডেক্স:
২০২৩-২৪ রঞ্জি ট্রফির নতুন মৌসুমের শুরুতে পাটনার মঈন-উল-হক স্টেডিয়ামে প্রচুর দর্শক এসেছেন। রঞ্জির দল বিহারের এটি ঘরের মাঠও। গতকাল এ মাঠেই মুম্বাইয়ের মুখোমুখি হয়েছে বিহার। আর সে ম্যাচেই অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনার কথা আজ জানিয়েছে ক্রিকেটবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইএসপিএন-ক্রিকইনফো। এ ম্যাচে শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত ওই ঘটনাই যে ঘটেছে, তা নয়। এই ম্যাচে বিহার দলের হয়ে ১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে বৈভব সূর্যবংশী।
আগে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটা জানানো যাক। বিহার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএ) থেকে নিষিদ্ধ হওয়া সাবেক সেক্রেটারি অমিত কুমার এই ম্যাচে নিজেই বিহারের একাদশ গঠন করেন। ওদিকে বিহারের পক্ষ থেকেও ‘অফিশিয়াল’ একাদশ বানানো হয়। কাগজ-কলমে একাদশ দুটি হলেও শেষ পর্যন্ত মাঠে নেমেছে বিহারের অফিশিয়াল একাদশই। ক্ষোভ দমাতে না পেরে স্টেডিয়ামের বাইরের গেটে এক অফিশিয়ালের ওপর অমিত কুমারের চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে বলেও জানিয়েছে ক্রিকইনফো। গতকাল বিকালে বিসিএ-এর আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিসিএর ওএসডি মনোজ কুমারের প্রাণনাশের লক্ষ্যে তার ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’অমিত কুমার একসময় বিসিএ সভাপতি রাকেশ তিওয়ারির দলে ছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) অধিভুক্ত সদস্যপদ পাওয়ার আগে বিসিএ নির্বাচনে জিতেছিল রাকেশ তিওয়ারির দল। বিসিসিআইয়ের সদস্যপদ পাওয়ার পর ২০১৮-১৯ মৌসুম থেকে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে সিনিয়র পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুমতি পায় বিহার। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে রাকেশ তিওয়ারির সঙ্গে অমিতের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। ক্রিকইনফো জানিয়েছে, অমিত কুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তিনি দলাদলি করছেন। ব্যাপারটি তিওয়ারির কানে ওঠার পর তিনি অমিতকে নিষিদ্ধ করেন। এরপর থেকে অমিত কুমার বিসিএ-র কোনো পদে নেই।এই বিতর্কের মধ্যেই রঞ্জি ট্রফিতে বিহারের হয়ে ১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে অভিষিক্ত হয়ে কীর্তি গড়েছে বৈভব। বিসিএ অফিশিয়ালি তার বয়স নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে ক্রিকইনফো। আর সে হিসাবে ১৯৮৬ সালের পর ভারতের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হলো এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের।
ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ জানিয়েছে, বৈভবের বয়স সঠিক হলে ভারতের সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে যুবরাজ সিং এবং শচীন টেন্ডুলকার তার পেছনে পড়েছেন। ১৫ বছর ৫৭ দিন বয়সে প্রথম শ্রেণিতে অভিষেক যুবরাজের। টেন্ডুলকারের অভিষেক ১৫ বছর ২৩০ দিন বয়সে। ভারতের আরেকটি সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ জানিয়েছে, তথ্যপঞ্জি ধারণ করা আছে, এমন প্রথম শ্রেণির ম্যাচ হিসাবে নিলে বৈভব প্রথম শ্রেণিতে অভিষিক্ত হওয়া ভারতের চতুর্থ সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়।এই তালিকায় যিনি সর্বকনিষ্ঠ, তিনি প্রথম শ্রেণির ইতিহাসেই সর্বকনিষ্ঠ—আলিমউদ্দিন। ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রিকেট স্ট্যাটিসটিশিয়ান অ্যান্ড হিস্টোরিয়ানস’ (এসিএস) জানিয়েছে, ১২ বছর ৭৩ দিন বয়সে ১৯৪২-৪৩ মৌসুমে রাজপুতনার হয়ে প্রথম শ্রেণিতে তাঁর অভিষেক হয়েছিল।
১৯৫৯-৬০ মৌসুমে ১২ বছর ৭৬ দিন বয়সে প্রথম শ্রেণিতে বিহারের হয়ে অভিষেক হওয়া এসকে বোস এ তালিকায় দ্বিতীয়। তিনি ভারতের হয়ে প্রথম শ্রেণিতে অভিষিক্ত দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ও। ১৯৩৭-৩৮ মৌসুমে ১২ বছর ২৪৭ দিন বয়সে উত্তর ভারতের হয়ে প্রথম শ্রেণিতে অভিষিক্ত হয়েছিলেন মোহাম্মদ রমজান। ভারতের হয়ে প্রথম শ্রেণিতে সর্বকনিষ্ঠ অভিষিক্তদের তালিকায় তিনি তৃতীয়।
বয়স ১৩ ছোঁয়ার আগেই প্রথম শ্রেণিতে অভিষিক্ত খেলোয়াড় আছেন মোট ৯ জন। পাকিস্তানের হয়ে ১২ বছর ৭৬ দিন বয়সে এই সংস্করণে অভিষিক্ত হয়েছিলেন দেশটির সাবেক পেসার আকিব জাভেদ। ভারতের ক্রিকেটার মোহাম্মদ আকরামের প্রথম শ্রেণিতে অভিষেক (১৯৬৮-৬৯) ১২ বছর ২১৭ দিন বয়সে। পাকিস্তানের রিজওয়ান সাত্তারের (১৯৮৫-৯৬) অভিষেক ১২ বছর ২৬৩ দিন বয়সে। ১২ বছর ৩৫৪ বয়সে অভিষেক ভারতের ক্রিকেটার সালিমউদ্দিনের (১৯৫৪-৫৫)। পাকিস্তানের ক্রিকেটার কাসিম ফিরোজের অভিষেক ১২ বছর ৩৬৩ দিন বয়সে (১৯৭০-৭১)।