‘১৯৭১ নিয়ে টুইট’ অনুমোদনের কথা স্বীকার ইমরানের, কী আছে ভিডিওতে?
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার) পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের একটি পোস্টকে ঘিরে দেশটির রাজনীতি এখন সরগরম। ইমরানের ভেরিফায়েড এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করা ওই ভিডিওতে দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঢাকার পতনের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
‘১৯৭১ সাল নিয়ে’ করা এই টুইট অনুমোদনের বিষয়টি ইমরান স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে এই টুইটে থাকা ভিডিওটির বিষয়ে দায় নেননি তিনি। শনিবার (৮ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
গত ২৬ মে ইমরান খানের এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা সেই ভিডিওতে বলা হয়েছে, “প্রত্যেক পাকিস্তানির উচিত ‘হামুদুর রহমান কমিশন’ রিপোর্টটি পড়া, যাতে করে তারা জানতে পারেন যে প্রকৃত বিশ্বাসঘাতক আসলে কে ছিল? জেনারেল ইয়াহিয়া খান নাকি শেখ মুজিবুর রহমান?”
নিজের অ্যাকাউন্টে এই ভিডিও পোস্ট করার পর থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন ইমরান খান ও তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
মূলত ইমরান খান গত এক বছর ধরে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বন্দি রয়েছেন। তিনি বেশ কয়েকটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং তার বিরুদ্ধে আরও মামলা বিচারাধীন রয়েছে। জেলে থাকার কারণে ইমরান খান নিজে তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারেন না।
এক্ষেত্রে পিটিআই বলে থাকে, পিটিআইয়ের সোশ্যাল মিডিয়া টিমের সদস্যরাই দলের চেয়ারম্যান ইমরান খানের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো পরিচালনা করেন। ইমরান খান ও পিটিআইয়ের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টগুলো থেকে ‘হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট’ বিষয়ক যেসব টুইট করা হয়েছে, সেগুলোকে ‘সেনাবাহিনীর জন্য মানহানিকর’ এবং একই সাথে ‘উস্কানিমূলক’ বলে মন্তব্য করেছেন সমালোচকরা।
তারা ইমরান খান ও তেহরিক-ই-ইনসাফের বিরুদ্ধে আগুনে ঘি ঢালারও অভিযোগ করছেন।
দ্য ডন বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান শুক্রবার তার এক বিতর্কিত টুইটের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন, যেখানে পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঢাকার পতনের সাথে তুলনা করা হয়েছে। কিন্তু নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে একইসঙ্গে পোস্ট করা একটি আনুষঙ্গিক ভিডিও থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন তিনি।
ইমরান জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি ভিডিওটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারবেন না কারণ ভিডিওটিতে কী আছে বা এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি জানেন না।
গত ২৬ মে ইমরান খানের এক্স অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা ওই ভিডিওটি ইতোমধ্যেই ৮৪ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে।
শুক্রবার আদিয়ালা কারাগারে জবাবদিহি আদালতের একটি সেশনে অংশ নেওয়ার পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ইমরান খান। সেখানে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তার অতীতের রেফারেন্সের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এসময় তিনি স্বীকার করেন, তিনি তখনও হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্ট পড়েননি।
ইমরান খান বলেন, সেই রিপোর্টে দুটি লক্ষ্য তুলে ধরা হয়েছে, প্রথমত- এই ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি না করা এবং ঢাকার পতনের দায় কী সেটা নির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর সবকিছুর জন্য জেনারেল ইয়াহিয়ার ক্ষমতা ধরে রাখার মোহকে দায়ী করেছে কমিশন।
বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার বলেন, দেশে (পাকিস্তানে) একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে এবং এর ফলে অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তিনি দাবি করেন, ক্ষমতাসীন পিডিএম সরকারের প্রবর্তিত জবাবদিহিতা আইনের সংশোধনী দেশটির ১১০০ বিলিয়ন রুপির ক্ষতি করেছে এবং এমন ক্ষতি পাকিস্তান বহন করতে পারবে না যখন দেশটি আগে থেকেই অর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে।
সাইফার মামলায় নিজের খালাসের উদ্ধৃতি দিয়ে ইমরান খান বলেন, তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য এফআইএ-এর ক্ষমা চাওয়া উচিত।
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করবেন কি না জানতে চাইলে ইমরান খান সেটির নেতিবাচক জবাব দেন এবং বলেন, তিনি ‘প্রক্সির’ পরিবর্তে প্রকৃত ক্ষমতাধারীদের সাথে আলোচনা করতে পছন্দ করবেন।
একজন সাংবাদিক ইমরান খানকে শেখ মুজিবুর রহমান এবং হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্টের উল্লেখ সম্পর্কে পিএমএল-এন প্রেসিডেন্ট নওয়াজ শরিফকে তার আগের সমালোচনা সম্পর্কে প্রশ্ন করেন, জবাবে ইমরান বলেন, ‘সে সময় আমি হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট পড়িনি। তবে এখন আমি এই প্রতিবেদনটি পড়েছি।’
নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে বিতর্কিত ভিডিও সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বিস্মিত হন এবং পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, জেলে থাকার সময় তিনি কীভাবে এক্সে ভিডিও পোস্ট করতে পারেন। তিনি বলেন, যেহেতু তিনি ভিডিওটি দেখেননি, তাই এ বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে পারছেন না।
এদিকে শুক্রবার ইমরান খানকে তার আইনজীবীদের উপস্থিতিতে এক্স পোস্টের ইস্যুতে চলমান তদন্তের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দেশটির তদন্তকারী দল এফআইএ। এসময় ইমরান খানকে তার এক্স পোস্ট এবং ভিডিওর মুখোমুখি করা হয়।
এর আগে ইমরান খান বলেছিলেন, তিনি কেবল তার আইনজীবীদের উপস্থিতিতেই এফআইএ’কে তদন্তে সহযোগিতা করবেন।