২২ বছর আত্মগোপনে থাকা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
দিনাজপুর প্রতিনিধি
দিনাজপুরের খানসামা এলাকায় ধর্ষণ এবং গর্ভপাত ঘটানোর অপরাধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তসলিম উদ্দিন (৫২) নামে এক পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাব।
তিনি গত ২২ বছর যাবৎ তরমুজ ব্যবসাসহ নানা পেশার আড়ালে আত্মগোপনে থেকেছেন। পরে তাকে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউসিয়া মার্কেট সংলগ্ন ফলপট্টি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩ এর একটি দল। গ্রেপ্তার তসলিম উদ্দিন দিনাজপুরের খানসামা দুবলিয়ার এলাকার বাসিন্দা।বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলির র্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রেপ্তার তসলিম উদ্দিন ২০০০ সালে দিনাজপুর জেলার খানসামা থানাধীন খামারপাড়া ইউনিয়নে ‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’ নামক এনজিওতে সুপারভাইজার হিসেবে চাকরিরত ছিলেন। তসলিম ৪ নম্বর খামারপাড়া ইউনিয়নের ৭টি বিদ্যালয়ের প্রায় ১৪ জন শিক্ষকের সুপারভাইজিং অফিসার ছিল এবং তারই অধীনে ভিকটিম বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এনজিও থেকে নিয়োগকৃত শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
একই কর্মসূচির আওতায় চাকরিরত থাকার সুবাধে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভিকটিমকে সঙ্গে নিয়ে বাচ্চাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলত। গ্রেপ্তার তসলিম ও ভুক্তভোগীর নিয়মিত যোগাযোগের সুবাধে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গ্রেপ্তার আসামি ছিল বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক। এসময় ভিকটিম তার বিবাহিত জীবন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল। তসলিম ছিল লম্পট প্রকৃতির। স্কুল ও কলেজ জীবনে সে প্রতারণা করে একাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে।
ঘনিষ্ঠতা ও যোগাযোগ বৃদ্ধির সুযোগে তসলিম ভুক্তভোগীকে নানাভাবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে প্রলুব্ধ করে। শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে ভিকটিমের অসম্মতি থাকায় সে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলার নাম করে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। একাধিকবার ধর্ষণের ফলে ভুক্তভোগী গর্ভবতী হয়ে পড়েন।বিষয়টি তসলিমকে জানালে সে অস্বীকার করে এবং গর্ভের ভ্রূণ নষ্ট করার জন্য প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। তাতে সম্মত না হয়ে তসলিমকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকলে তসলিম নিজেকে বিবাহিত দাবি করে এবং তার পক্ষে ভিকটিমকে বিয়ে করা অসম্ভব বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
অন্তঃসত্ত্বা ভিকটিম বাধ্য হয়ে বিষয়টি তসলিমের পরিবারকে জানালে তসলিম সম্মানহানির প্রতিশোধ নিতে প্রতারণা করে ভিকটিমকে তার সঙ্গে একান্তে যোগাযোগের কথা বলে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গর্ভপাত করায়।এসময় ভুক্তভোগী ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। মানসম্মান এবং গর্ভের সন্তান হারিয়ে অসহায় ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং বিয়ের জন্য প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেন। এমনকি এসময় তিনি আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। তখন তসলিম পূর্বের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় একটি ঔষধ কোম্পানির ডেলিভারি ম্যান হিসেবে যোগদান করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে ভুক্তভোগী নারীর পরিবার বাধ্য হয়ে তসলিমের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণসহ ভ্রূণ নষ্ট করার অপরাধে পেনাল কোডের ৩১৩ ধারায় দিনাজপুর জেলার খানসামা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৩ সালে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, দিনাজপুর তার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন।
মামলা রুজু হওয়ার পর থেকেই গ্রেপ্তার তসলিম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিজ এলাকা ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসেন। এমনকি গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করেন। প্রথম ২ বছর তিনি ঢাকায় একটি ওষুধ কোম্পানির ডেলিভারি ম্যান, এরপর ৩ বছর সিলেটে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। এরপর ঢাকায় ফেরত এসে একটি লিমিটেড কোম্পানির অর্ডারলি হিসেবে কাজ করেন।
রায় হওয়ার পর আত্মগোপনে থাকার উদ্দেশ্যে গাজীপুরে কখনো ভ্যান চালিয়ে, কখনো মাটিকাটা শ্রমিকের কাজ করে, কখনো এনজিওর মাঠ কর্মী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে। এনজিওর মাঠকর্মী থাকাকালীন গাজীপুরের শ্রীপুর এবং কাশিমপুর এলাকার বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে নামে বেনামে প্রতারণার মাধ্যমে সুকৌশলে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় সে আত্মগোপন করেন।তসলিম গাউছিয়া বাজারে ফলপট্টিতে একটি ফলের আড়তের তরমুজ ব্যবসা শুরু করেন। এভাবে দীর্ঘ ২২ বছর পলাতক থাকার পর র্যাব-৩ এর একটি দলের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।