৫০ বছরের পুরোনো স্টেডিয়াম, কেন এটাকে সংস্কার করা দরকার: পাপন
স্টেডিয়াম করে দিতে চেয়েছিল স্পেন, নেয়নি মন্ত্রণালয়
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
ডেস্ক রিপোর্ট :
সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। নতুন করে ঢেলে সাজাবেন। আর এটা করতে গিয়ে প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল আজও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংস্কারকাজ শেষ হয়নি। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে সংস্কারকাজ বাড়ে, বাজেট বাড়ে, কাজ শেষ হয় না। বন্ধ থাকে স্টেডিয়াম। এখন নতুন মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনকে বলা হয়েছে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ হবে। তার মানে আরও এক বছর দেশের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামে খেলা থাকবে না। জাতির পিতার নামে স্টেডিয়াম।
অথচ প্রায় পাঁচ বছর ধরে খেলা থাকবে না। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংস্কার বিলাসিতার কবলে পড়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের আজ এই বেহাল দশা। দেশের ফুটবল ক্লাবগুলো খেলতে পারছে না। আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলা হচ্ছে না। বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মেসিদের আর্জেন্টিনা আসতে পারেনি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের কাজ শেষ হয় না বলে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ফিফার ম্যাচ, এএফসির ম্যাচ আয়োজন করতে পারেনি বাফুফে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম দিনের পর দিন খেলা বন্ধ থাকছে। এসব চিত্র দেখে ফিফা এএফসি বিস্মিত হয়ে যায়।
পাপনকে বলা হয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ চলবে। পাপন কথা শুনেছেন। কিন্তু তিনি তখনো জানতেন না বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ভুলেভরা সংস্কার করা হয়েছে। মাঠের মাপ নেই। পানি দেওয়ার স্প্রিংলার বসানো হয়েছে, সেটার কারণে যে কোনো মুহূর্তে ফুটবলার মারাত্মক আহত হতে পারেন। এমনকি মৃত্যু ঝুঁকিও রয়েছে সেখানে। মাঠের সাইড লাইন ঘেঁষে অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকের কংক্রিট অংশের বর্ডার লাইন। এটিও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো মুহূর্তে জখম হতে পারে। আর মাথায় আঘাত লাগলে মৃত্যু ঝুঁকিও থাকতে পারে। গোলপোস্টের ভেতরে ঢুকে গেছে অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক। ড্রেসিংরুমে পর্যাপ্ত আসন ব্যবস্থা নেই। প্রেসবক্স আজও সম্পন্ন হয়নি। অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে সাংবাদিকদের বসার স্থান। বার বার বলার পরও খেলা উপযোগী করতে পারেনি। অসমাপ্ত অবস্থায় প্রতিমন্ত্রী বিদায় নিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংস্কারে গল্প শুনে পাপন বললেন, ‘আমাকে তো এগুলো বলা হয়নি। কিছুই জানি না, শুনে আমারই ভয় লাগছে।’ মন্ত্রী প্রশ্ন তুলেন ৫০ বছরের পুরোনো একটি স্টেডিয়াম কেন এটাকে সংস্কার করা দরকার। যাই হোক বাফুফে হয়ত বলবে। আমি স্টেডিয়াম দেখতে যাব।’
এ যাবৎ কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংস্কার করতে গিয়ে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে সেটা দিয়ে নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করা যেত। সেটা কোনো ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আগ্রহ দেখায়নি। যারাই এসেছিল তারাই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। স্পেন নতুন একটি স্টেডিয়াম বানিয়ে দিতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ভেঙে ন্যু ক্যাম্পের আদলে স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে চেয়েছিল দুই বছরের মধ্যে। এক টাকাও বাংলাদেশকে দিতে হবে না। সব খরচ স্পেন থেকে আসবে। তারাই নির্মাণকাজ করবে। আধুনিক স্টেডিয়াম বানাবে। স্টেডিয়ামের কয়েক হাজার গাড়ি রাখার পার্কিং প্লেস থাকবে।
খেলোয়াড়দের জন্য আধুনিক সব সুযোগসুবিধা রাখা হবে। স্টেডিয়ামের বর্তমান মার্কেটটাকে আধুনিক ব্যবস্থায় গড়ে তুলবে। যেখানে তারা আরও ভালোভাবে ব্যবসা করবে। এই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলে কথা বলেছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত। স্পেনের পরিকল্পনার বিষয়টি তুললে ক্রীড়ামন্ত্রী পাপন বলেন, ‘আমি ঠিক এই প্রশ্নটাই করেছিলাম। আমার জানা মতে এটা তো (বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) স্পেন করে দেওয়ার কথা। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন তুমি ডিজাইনটা দেখে দিও তো। যদিও এটা ফুটবলের, আমার সাথের না। আমি আজকে এটা জিজ্ঞেস করেছিলাম (মন্ত্রণালয়ের সভায়) উনারা বললেন, এটা আর হয়নি। এখন কেন হয়নি এটা এই মুহূর্তে বলার মতো ঐ পরিমাণ ইনফরমেশন আমার কাছে নেই। এজন্য উনারা সংস্কারে (বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) গেছে।’ মন্ত্রী পরিষ্কার করে বললেন, ‘এটা এতো পুরান হয়ে গেছে সংস্কারে আর চলবে না। আমাদের নতুন স্টেডিয়াম দরকার।’
পূর্বাচলে শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম
আগামী জুনের মধ্যে পূর্বাচলে শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে গতকাল জানিয়েছেন ক্রীড়ামন্ত্রী। ফেব্রুয়ারিতে বিসিবির সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। তার পরই টেন্ডার। জুনেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। ডিজাইন অনুমোদন হয়ে গেছে।
পূর্বাচলে পাঁচটা ফেডারেশন জায়গা পাবে
শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশে আরও বিশাল জায়গা জুড়ে ক্রীড়া স্থাপনা থাকবে। ক্রিকেট খেলা ছাড়াই জুডো, কারাতে, ভারোত্তোলন, দাবা, বিলিয়ার্ড অ্যান্ড স্নুকার খেলার জন্য স্টেডিয়ামের পাশে জায়গা থাকলেও উল্লেখিত খেলাগুলোই থাকবে তা নয়। ফেডারেশনের সঙ্গে কথা বলবেন মন্ত্রী। যেসব খেলাগুলোর জন্য জায়গা জরুরি প্রয়োজন তাদের জন্য পূর্বাচলে শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামের পাশের এলাকায় ব্যবস্থা করা থাকবে। বিসিবির টাকায় এগুলো করা হবে বলে জানিয়েছেন পাপন। যেসব খেলা স্থান পাবে সেই সব খেলার সব ক্রীড়াসামগ্রী বিসিবির টাকায় কেনা হবে। পাপন বলেন, ‘যেগুলো করা যাবে সেগুলো করব আমরা।’
ফেডারেশনগুলোর জন্য স্পন্সর
ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন বলে আবারও জানিয়েছেন ক্রীড়ামন্ত্রী। কার কি লাগবে সেগুলো শুনে স্পন্সরের ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছেন মন্ত্রী। যাদের স্পন্সর যাদেরকে দেওয়া হলে তারা এগিয়ে যেতে পারবে এবং তারা কতো দিনে ফল পাবে সেটিও বিবেচনা করা হবে। যারা পুরোনো স্পন্সর এখন যেসব খেলায় অর্থ দিচ্ছে, তারাও থাকবে। নতুন স্পন্সর সংগ্রহ করা হবে। সেটি আলোচনা করে নির্ধারণ করা হবে।