নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশ নিয়ে তরুণদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। অধিকাংশ তরুণ বিদেশ যেতে চায়, হোক তা পড়াশোনা বা কাজের জন্য। তবে তাদের মধ্যে বাংলাদেশি জাতীয়তা নিয়ে গর্ব ও চেতনা দৃশ্যমান। রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আস্থা ফেরাতে তরুণরা অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ চায়।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের ‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ ২০২৪’ গবেষণা সিরিজের ফলাফল থেকে তরুণদের এই দৃষ্টিভঙ্গি জানা গেছে। গতকাল বুধবার ঢাকায় ব্রিটিশ কাউন্সিল মিলনায়তনে গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এমন জরিপের ফল প্রকাশ করল ব্রিটিশ কাউন্সিল।
এর আগে ২০১০ ও ২০১৫ সালে দুটি প্রতিবেদন করা হয়।
জরিপের ফল এবং সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন এম অ্যান্ড সি সাচি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসেসের ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর অব রিসার্চ আইবেক ইলিয়াসভ। এই গবেষণায় নানা শ্রেণি-পেশার ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তিন হাজার ৮১ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ফলাফল থেকে জানা যায়, অর্ধেক অংশগ্রহণকারী (৪৬%) লিঙ্গ বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছেন। বিশেষ করে নারীরা পারিবারিক সহিংসতার শিকার।
আইবেক ইলিয়াসভ বলেন, যদিও তরুণদের মধ্যে বাংলাদেশি জাতীয়তার গর্ব ও চেতনার দৃশ্যমান প্রতিফলন রয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের আশাবাদ কমেছে। ২০১৫ সালে ৬০ শতাংশ তরুণ দেশ নিয়ে আশাবাদী ছিলেন, ২০২৪-এ তা কমে হয়েছে ৫১ শতাংশ। ৪২ শতাংশ তরুণের কাছে বেকারত্ব একটি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো বিষয়। ৫৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা পড়াশোনা বা কাজের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ইচ্ছুক। এর মধ্যে সৌদি আরবে ২৭ শতাংশ ও কানাডায় ১৮ শতাংশ যেতে চান। চাকরির সুযোগ কম থাকায় দেশে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রত্যাশা বেড়েছে।
জরিপের ফল বলছে, প্রতি ১০ জন তরুণের ৪ জনই (৪৪%) আগামী ৫ বছরের মধ্যে নিজেদের ব্যবসা শুরু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ফলাফল থেকে আরও দেখা যায়, ৫৮ শতাংশ তরুণ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আরও আস্থা আনা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ বলেন, প্রতিবেদনটি শুধু একটি বিশ্লেষণ নয়, এটি বাংলাদেশের অর্জনগুলোর প্রতিফলন। আমরা আপনাদের (তরুণদের) কণ্ঠস্বরকে সমর্থন দিতে, শক্তিশালী করতে এবং আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; যেন আপনারা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে পারেন যেখানে সব মানুষের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করে যুক্তরাজ্য সরকার। এ প্রতিবেদন তরুণদের কণ্ঠস্বরকে আরও জোরালো করেছে এবং তরুণ প্রজন্মের ক্ষমতায়নে আমাদের সমন্বিত দায়িত্বকেও তুলে ধরেছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিল দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হেলেন সিলভেস্টার বলেন, এ প্রতিবেদনে তরুণদের অগ্রগতির চালিকাশক্তি হিসেবে তাদের সম্ভাবনাকে তুলে ধরা হয়েছে।