অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে নিয়ে গান, আটকের ৮ ঘণ্টা পর মুক্ত পাঁচজন

প্রকাশিত: ৪:০৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২৪

যশোর প্রতিনিধি:

যশোরে ৫ম আন্তর্জাতিক কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের উন্নয়নের গুণকীর্তন করে রচিত সঙ্গীত বাজানোর অভিযোগে পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার ৮ ঘণ্টা পর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে যশোর জিমনেশিয়াম থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটকরা হলেন- ‘জয়তী সোসাইটির’ নির্বাহী পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শেকড়ের’ সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা রাসু, বাংলাদেশ সোতোকান কারাতে দো অ্যাসোসিয়েশন (কিউখাই) খুলনা বিভাগের সদস্য সচিব ইমরান হাসান টুটুল, বাংলাদেশ কারাতে পরিষদ যশোরের সভাপতি হুময়ান কবির ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম।

শুক্রবার যশোর জিমনেশিয়ামে ৫ম আন্তর্জাতিক কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করেন বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন। সহযোগিতায় ছিলেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জয়তী সোসাইটি। চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকার টিম অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। দুপুরে প্রধান অতিথি অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন শেষে শিশুদের অংশগ্রহণে যশোর নিয়ে ব্র্যান্ডিং গান হিসেবে পরিচিত ‘খেজুর গুড়ের ফুলের মেলা, নকশি কাঁথার যশোর জেলা’ শিরোনামে গানটিতে নৃত্য পরিবেশন করেন। গানে যশোরের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সরকারের উন্নয়নের স্থাপনার কথা রয়েছে। সেই গানে শেখ হাসিনার নাম উচ্চারণ করে নৃত্য পরিবেশন করাতে ক্ষুদ্ধ হন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। গান শেষে তিনি আয়োজক ও নৃত্য পরিবেশনকারী শিশুদের আটকের নির্দেশ দেন।
একপর্যায়ে আয়োজকরা তাদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেও জেলা প্রশাসক তার সিদ্ধান্তের বিষয়ে অনড় থাকেন। পরে আয়োজকদের অনুরোধে সাংস্কৃতিক পর্বে অংশ নেওয়া শিশুদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেন ডিসি। পরে ঘটনাস্থল থেকে ‘শেকড়ের’ সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা রাসু, বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন যশোরের সভাপতি হুময়ান কবির ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। বাকি দুইজন ‘জয়তী সোসাইটির’ পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস ও বাংলাদেশ সোতোকান কারাতে দো এসোসিয়েশন (কিউখাই) খুলনা বিভাগের সদস্য সচিব ইমরান হাসান টুটুলকে মুঠোফোনে থানাতে ডেকে এনে আটক করে পুলিশ। অর্চনা বিশ্বাসকে নারী অধিকার সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গত সরকারের আমলে (২০২১) রোকেয়া পুরস্কার দেওয়া হয়।

অর্চনা বিশ্বাস বলেন, সেচ্ছাসেবী ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘জয়তী সোসাইটি’ অনুষ্ঠানের স্পন্সর হিসেবে ছিল। অনুষ্ঠান কিভাবে হবে; কারা থাকবে; সেটা জানি না। পুলিশ আমাকে ডেকে এনে থানাতে বসিয়ে রেখেছে।

রওশন আরা রাসু বলেন, আমি সংস্কৃতিকর্মী। ‘শেকড়’ নামে আমার একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। আয়োজকরা জানিয়েছিল উদ্বোধন পর্বে একটি সাংস্কৃতিক পর্ব থাকবে। সেখানে কয়েকটি নাচের পর্ব থাকবে। তাই আমার সংগঠনের কয়েকজন শিশুদের দিয়ে সেখানে নৃত্য পরিবেশন করানো হয়। যশোরের থিমসং হিসেবে পরিচিত ‘খেজুর গুড়ের ফুলের মেলা, নকশির কাঁথার যশোর জেলা’ শিরোনামে গানটিতে নৃত্য পরিবেশন করেন তারা। এই গানে যশোরের উন্নয়ন নিয়ে কথা রয়েছে; ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।

জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, উদ্বোধনের পর খেলা শুরুর আগে নাচের সঙ্গে সাউন্ড বক্সে থিমসং বাজানো হচ্ছিল। ওই সঙ্গীতে অন্তর্র্বতী সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠায় পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করবে। আসলে তাদের কী লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল।

যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। রাতে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।