অনৈতিক সম্পর্ক: বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েই নির্যাতনে প্রাণ হারান জেপি নেতা সালাম বাহাদুর

প্রকাশিত: ৭:৫৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০২৩

এসএম দেলোয়ার হোসেন:

অনৈতিক সম্পর্কের জেরে বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারালেন জাতীয় পার্টির (জেপি) কেন্দ্রীয় নেতা সালাম বাহাদুর। এরপর তার মৃত্যু নিশ্চিত জেনে ঘটনা ধামাচাপা দিতেই কথিত চিকিৎসা দেওয়ার নামে একটি প্রাইভেটকারযোগে রাতের আঁধারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে মিরপুর রোডের নির্জনস্থানে লাশ রেখে পালিয়ে যায় নির্যাতনকারীরা। সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তথ্যপ্রযুক্তি মাধ্যমে জেপি নেতা সালাম হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মা-মেয়েকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে তাৎক্ষণিক পুলিশ তাদের নাম জানাতে রাজি হয়ন।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার কলেজ গেট এলাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ফেলে যাওয়া জাতীয় পার্টির (জেপি) কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম বাহাদুরের (৫২) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত দুই নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার (১৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর শ্যামলীতে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।

তিনি জানান, ঘটনাস্থল ও এর আশপাশের সিসিটিভির ফুটের সংগ্রহপূর্বক পর্যালোচনা করে সন্দেহভাজনদের সনাক্ত করা হয়। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আসামিদের অবস্থা নিশ্চিত হয়ে গতকাল মঙ্গলবার ভোরের দিকে রাজধানীর ঢাকা ও মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার গাজিন্দা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা দুজন সম্পর্কে মা-মেয়ে। তবে পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় গ্রেফতারদের নাম প্রকাশ করা ঠিক হবে না বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, গত ১৫ জুলাই দিবাগত রাত ১১টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। পরে জানা যায়, নিহত ব্যক্তি জাতীয় পার্টির (জেপি) কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক আবদুস সালাম বাহাদুর। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি জানান, মামলার তদন্তে নেমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সিসি ক্যামেরা অকার্যকর পায় পুলিশ। পরে নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এবং মোবাইল ট্র্যাকিং ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দুই নারীকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিসি আজিমুল হক বলেন, ৫-৬ বছর আগে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি সুপার শপে নিহত সালামের সঙ্গে গ্রেফতার মেয়েটির পরিচয় হয়। চাকরি দেওয়ার কথা বলে পরিচয় থেকে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। আর এ সম্পর্কের বিভিন্ন মুহূর্ত গোপনে ধারণ করে রাখেন সালাম। এরপর মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে জেপি নেতা আবদুস সালাম বাহাদুর। সালামের এমন কাজে দিশেহারা মেয়েটি ঢাকা ছেড়ে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে নিজ বাড়িতে চলে যায়। কিন্তু সালামের ব্ল্যাকমেইল চলতেই থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ জুলাই বিকেলে দেখা করতে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার গাজিন্দা গ্রামে মেয়েটির বাড়িতে যান সালাম। তিনি সেখানে যাওয়ার আগেই স্থানীয় কয়েকজনকে বিষয়টি জানায় মেয়েটির পরিবার। মেয়েটির বাড়িতে যাওয়ার পরই সালামের ওপর শুরু হয় অমানুষিকভাবে শারীরিক নির্যাতন। স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় সালামের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য বারবার নির্যাতন করা হয়। এতে সালাম গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনার পথে মারা যান জেপি নেতা সালাম। তার মৃত্যুর বিষয়টি টের পেয়ে অন্যরা পথিমধ্যেই গাড়ি থেকে নেমে যায়। এরপর গ্রেফতার মেয়ে ও তার মা সালামের মরদেহ গাড়িতে করে রাতের আঁধারে ঝামেলায় এড়াতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে মিরপুর রোডের নির্জনস্থানে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। মরদেহ উদ্ধারের পর নিহত সালামের শরীরে বিভিন্ন ক্ষত ও আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় পুলিশ। গ্রেফতার মা-মেয়ের সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।