
নিজেস্ব প্রতিবেদক:
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং তাদের সন্তানের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার অধিকার লঙ্ঘন করেছে দখলদার বাহিনী। ইসরায়েলের গাজা অবরোধ এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে আক্রমণ ছিল নারীর জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।
সম্প্রতি ‘একটি ইনকিউবেটরে পাঁচ শিশু: গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণে অন্তঃসত্ত্বা নারীর অধিকার লঙ্ঘন’ শীর্ষক ৫০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গাজার নারীরা যে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে সন্তান প্রসব করছেন; তার উন্নতির সম্ভাবনা কম। অন্তঃসত্ত্বা ও বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েরা অস্থায়ী ও ভিড়ে ঠাসা জায়গায় গণশৌচাগার ব্যবহার করছেন। এর ফলে বিশেষভাবে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। ফলে প্রি-টার্ম লেবার, কম ওজনের শিশুর জন্ম এবং মৃত সন্তান প্রসবের আশঙ্কা বাড়ছে। এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘ জানায়, ৪৮ হাজারের বেশি অন্তঃসত্ত্বা নারী জরুরি বা বিপজ্জনক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হচ্ছেন। গত জুলাই মাসে ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর গাজায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর হার ৩০০ শতাংশ বেড়েছে।
এইচআরডব্লিউ জানায়, গাজায় হাসপাতালগুলোতে অন্তঃসত্ত্বা নারীর উপচে পড়া ভিড়। এ ভিড় থেকে তাদের তাড়াহুড়ো করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কখনও কখনও সন্তান জন্ম দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের হাসপাতাল থেকে বাধ্যতামূলক ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। কারণ, ইসরায়েলি আগ্রাসনে হতাহতদের হাসপাতালে আনা হচ্ছে। তাদের জন্য জায়গা খালি করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে সেবা দেওয়া যেন বিলাসিতা। নবজাতকের যতœও ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাফাহর আল-হেলাল আল-এমিরাতি ম্যাটারনিটি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, এখানে এত কম ইনকিউবেটর এবং অকাল জন্ম নেওয়া শিশু এত বেশি, যা অকল্পনীয়। সেখানকার চিকিৎসকরা একটি ইনকিউবেটরে চার বা পাঁচটি শিশুও রাখতে বাধ্য হয়েছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এসব শিশুর বেশির ভাগই পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে। তীব্র শীতে আশ্রয়ের অভাবে অনেক নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিচালক বেলকিস উইল বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে নারীর মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশন, পানি এবং খাবারের অভাবের মধ্যেই গর্ভকাল পার করতে হচ্ছে। এসব নারী এবং নবজাতক প্রতিরোধহীন মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে।’
ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনিদের পানি সরবরাহ থেকে বঞ্চিত করেছে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার মতো ঘৃণ্য কাজ। অনেক জায়গায় নিজেদের পরিষ্কার রাখার জন্য পানি ছিল না। এমনকি তৃষ্ণা নিবারণের মতো পানিও ছিল না। এ কারণে গাজার অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারীর পানিশূন্যতা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীর রক্তস্বল্পতা, একলাম্পসিয়া, রক্তক্ষরণ, সেপসিসসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। সঠিক চিকিৎসা ছাড়া এর ফল ভয়াবহ হতে পারে।