অপরাধ ঢাকতে নিজের স্বাক্ষর জাল করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

প্রকাশিত: ১:৪২ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি  নাটোর 

কাজ না করেই গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যন্ত্রপাতি মেরামত বাবদ ৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করা হয়েছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে ১৮ মার্চ সকালে হিসাবরক্ষণ অফিসে বিল-ভাউচারটি দাখিল করা হয়েছিল।বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় বিল-ভাউচারে দেওয়া নিজের স্বাক্ষর জাল বলে দাবি করছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মুজাহিদুল ইসলাম। এসব কারণে বিলটি বর্তমানে স্থগিত করেছে হিসাবরক্ষণ অফিস।

 

দাখিল করা বিল-ভাউচারে দেখা গেছে-২১ নম্বর টিআর ফরমে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ‘ক্রয়, সরবরাহ ও সেবা বাবদ ব্যয়ের বিল’ দাখিল করা হয়েছে ৬৭ নম্বর ভাউচারে। সিংড়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হক এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নাজমুল হাসানের নামে বিলটি হাসপাতাল থেকে ছাড় করা হয় ১৮ মার্চ। অর্থপ্রাপ্তির জন্য ঐ দিনই উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে ভাউচারটি দাখিল করানো হয় হাসপাতালের পিয়ন তুহিন শেখকে দিয়ে।

জানা গেছে, যন্ত্রপাতি মেরামতের জন্য খুব গোপনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত একটি ‘কোটেশন বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করা হয় চলতি মাসের ৩ তারিখে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরদিন ৪ মার্চ এই কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত চিঠিতে ‘কোটেশন কমিটি গঠন’ এবং ৫ মার্চ ‘সার্বে বোর্ড’ গঠন করা হয়। তুলনামূলক বিবরণীতে ১৭টি ক্যাটাগড়িতে যন্ত্রপাতি মেরামত ব্যয় ধরা হয় ৩ লাখ ২৯ হাজার ৯৯১ টাকা। ১১ মার্চ দুপুরে তুলনামূলক বিবরণী কমিটির সভা দেখিয়ে সিংড়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হক এন্টারপ্রাইজকে মেরামতের কাজটি দেওয়া হয়। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নাজমুল হাসান কাজটি পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।

বিল-ভাউচার ঘেঁটে দেখা গেছে, ১১ মার্চ কার্যাদেশ দেওয়ার পর থেকে মাত্র ছয় দিনে ১৭টি ক্যাটাগড়ির যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজ সম্পাদনের কথা কাগজে-কলমে বলা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নাজমুল হাসান স্বাক্ষরিত তারিখবিহীন একটি কোটেশন বিলও দেখানো হয়েছে। সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে কোনো যন্ত্রপাতি মেরামতের তথ্য পাওয়া যায়নি। অথচ ১৮ মার্চ টাকা উত্তোলনের জন্য বিল-ভাউচার দাখিল করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতলের পিয়ন তুহিন শেখ  বলেন, মেরামতকাজের জন্য ‘কোটেশন বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ থেকে শুরু করে হিসাবরক্ষণ অফিসে বিল-ভাউচার দাখিল পর্যন্ত নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো কোনো সভায় হয়নি, বরং স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলামের নির্দেশে তিনি ১৮ মার্চ তুলনামূলক বিবরণী কমিটির সদস্যদের অফিসে গিয়ে স্বাক্ষরগুলো সংগ্রহ করেছেন।

তিনি বলেন, বিলটি পাশের পর হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর নাজমুল হাসান তার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা দাবি করেন। অনৈতিক সুবিধা না দেওয়ায় অডিটর, সুপার ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার স্বাক্ষরে পাশ হওয়া বিলটি আটকে দেওয়া হয়। পরে তিনি সাংবাদকর্মীদের সহযোগিতা নিলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিজের স্বাক্ষর জাল দাবি করে তার ওপর ভুয়া বিলের দায় চাপাচ্ছেন।

তুলনামূলক বিবরণী কমিটির সদস্য চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান, চিকিৎসক রাজিব হোসেন, সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম ও হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সুজাউদ্দৌলা  বলেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মুজাহিদুলের নির্দেশমতো তারা বিবরণী তালিকায় স্বাক্ষর করেছেন। এ নিয়ে হাসপাতলে কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি।স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম  বলেন, তার স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া বিল দাখিল করেছেন পিয়ন তুহিন শেখ।