ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি হস্তক্ষেপে অবশেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হচ্ছে। তৃতীয় দফায় নির্ধারিত ১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) জেলা সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে বিএনপির দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা অংশ নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি ১৫ বছর পর দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করে। তবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির একাংশের নেতাকর্মীদের বিরোধিতায় সম্মেলন স্থগিত হয়। পরে আবারও দ্বিতীয় দফায় ১৮ জানুয়ারি সম্মেলনের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেই তারিখেও অনুষ্ঠিত হয়নি জেলা বিএনপির সম্মেলন। এক পক্ষের বিরোধিতা থামিয়ে দেয় দ্বিতীয় দফার আয়োজন। পরে দুটি তারিখই পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। সম্মেলন সফলে লাঠি মিছিল, আবার সম্মেলনের বিরোধিতা করে মশাল, ঝাড়ু ও জুতা মিছিলও হয়েছে।
কমিটি ও নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হকের নেতৃত্বে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বড় একটি অংশ এক পক্ষে। তারা দুজনই জেলা বিএনপির ৩২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। অন্যদিকে আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম ও সদস্য কবির আহমেদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে আরেক পক্ষ সক্রিয়। প্রায় দুই বছর ধরে পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করছে দুই পক্ষ।
তবে সম্প্রতি জেলা বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধ সম্মেলন ঘিরে আরও বেড়েছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে এমনকি ঢাকাতে দুই পক্ষকে ডেকে নিয়ে সুরাহার চেষ্টা করলেও এতে সফল হননি।
সস্মেলনের বিপক্ষে থাকা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকনের অভিযোগ, জেলার ১৪টি ইউনিটের ত্যাগী, আন্দোলন-সংগ্রামে কারাভোগ করা নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে ও স্বচ্ছ ভোটার তালিকা না করে সম্মেলনের প্রস্তুতি নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল মন্নান ও সদস্য সচিব আলহাজ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ।
তবে অভিযোগের পাতা উল্টে শেষ পর্যন্ত তারেক রহমানের সরাসরি হস্তক্ষেপে দুই পক্ষের মধ্যে এখন ঐক্যের সুবাতাস দেখা দিয়েছে।
সম্মেলন নিয়ে দুই পক্ষের কর্মসূচির জেরে গত মঙ্গলবার রাতে ভার্চ্যুয়ালি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হকের সভা হয়। সভায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ১ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন সফল করার নির্দেশ দিলে তারা সম্মত হন।
তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনার পর অবশ্য সম্মেলনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ভোট ছাড়া নেতৃত্ব নির্ধারণের দায়িত্ব নিয়েছেন তারেক রহমান নিজেই।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন, তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন হবে। দ্বিতীয় অধিবেশনের বিষয়টি তিনি বিবেচনায় রাখবেন বলে জানিয়েছেন। তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা সম্মেলনে যোগ দেব।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মান্নান জানান, পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। সম্মেলন সফলে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।