খেলাধুলা ডেস্ক:
রোঁলা গ্যারোর লাল কোর্টে ২০০৫ সালে এসেছিলেন সাধারণ এক স্প্যানিশ কিশোর হয়ে। এরপর যখন ফ্রেঞ্চ ওপেনটা জিতলেন, সেটাকে দেখা হয়েছিল এক অঘটন হিসেবে। কিন্তু এরপরের অর্ধযুগ যা করলেন, তাতে ওই কিশোর হয়ে উঠলেন কিংবদন্তি। নাম তার রাফায়েল নাদাল। ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম টেনিস শিরোপা যার নামের পাশে। ফ্রেঞ্চ ওপেনে জিতেছেন ১৪ শিরোপা।
সেই নাদাল ২০২৪ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেন থেকে বিদায় নিলেন প্রথম রাউন্ডেই। এর আগে এমন দিন তাকে কখনোই দেখতে হয়নি। ফ্রেঞ্চ ওপেনেই তিনি হেরেছেন মোটে ৩ ম্যাচ। গতকাল (সোমবার) রাতে ৪র্থ বার হেরেছেন আলেকসান্দার জভেরেভের কাছে। তবে সেটাও প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে। এর আগে কখনোই দ্বিতীয় রাউন্ডেও না হারা নাদাল এবার বিদায় নিলেন প্রথম রাউন্ড থেকেই।
ফ্রেঞ্চখেলা মোট ১১৬ ম্যাচে আজ চতুর্থ হার দেখলেন নাদাল। কেউ কেউ ভেবে নিতে পারেন, এটাই হয়তো শেষবারের মতো! শেষ দুই বছরে তার ইনজুরির মাত্রা দেখলে এমনটা ভাবা অমূলক নয় মোটেই। কোমর ও মাংসপেশির চোটে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ফ্রেঞ্চ ওপেনের আগ পর্যন্ত মাত্র চারটি টুর্নামেন্টে খেলেছেন নাদাল।
এবারের আসরে র্যাঙ্কিংয়ে ২৭৬তম অবস্থানে থেকে অবাছাই হিসেবে ড্রয়ে প্রথম রাউন্ডে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছিলেন চতুর্থ বাছাই জভেরেভকে। যাকে পরে বলেছিলেন ‘সম্ভাব্য সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ’ হিসেবে। এরপর সেই জভেরেভের কাছে হারতে হলো।
এমন হারের পর ২২ বারের গ্র্যান্ডস্ল্যামজয়ী নাদাল এক প্রকার অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিলেন কোর্টে দাঁড়িয়েই। সাধারণত হেরে যাওয়া খেলোয়াড়ের সাক্ষাৎকার নেওয়ার চল নেই ফ্রেঞ্চ ওপেনে। তবে নাদাল বলেই কি না ব্যতিক্রম হলো এদিন। আর তখনই দিলেন অবসরের ইঙ্গিত, ‘আমি ঠিক জানি না এটাই শেষবারের মতো কি না। আমি শতভাগ নিশ্চিত নই। তবে যদি সেটাই হয় তাহলে আমি এই সময়টা উপভোগ করতে চাই। আজ কেমন লাগছে সেটি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।’
তবে ফ্রেঞ্চ ওপেনে শেষের ইঙ্গিত দিলেও ফ্রান্সে আবার টেনিস র্যাকেট হিসেবে আসবেন নাদাল। দুই মাস পরেই অলিম্পিক। সেখানে খেলতে যান ৩৮-এ পা দিতে চলা এই টেনিস কিংবদন্তি, ‘এটাই শেষ নয়। এখানে আবার হয়তো ফিরব দু’মাস পর। অলিম্পিক্স খেলতে চাই। ওটাই এখন আমার এক মাত্র অনুপ্রেরণা। তার পর জানি না। সে জন্য প্রস্তুতি নেব। সেরা টেনিস উপহার দিতে চাই আপনাদের।’
নাদাল কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পরিবার আর কোচিং স্টাফের প্রতি। সেখানেই আবার ইঙ্গিত মিলল বিদায়ের, ‘ওদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এত দিন ধরে আমার পাশে রয়েছে। সব রকম পরিস্থিতিতে আমাকে সমর্থন করেছে। ওদের ছাড়া এতটা পথ আসতেই পারতাম না। আমার সব সাফল্যের কৃতিত্ব ওদের প্রাপ্য। আমার টেনিসজীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ওরা। ওদের জন্যও আরও এক বার এই কোর্টে ফিরতে চাই দু’মাস পর। আমার এখন ২৮ বছর বয়স। দুঃখিত প্রায় ৩৮ হবে। আসলে বয়স হিসেবে ২৮টাই আমার পছন্দ। যাই হোক এই বয়সে আমার শুধু একটাই লক্ষ্য রয়েছে।’
রজার ফেদেরার আর রাফায়েল নাদালের দ্বৈত আধিপত্যের ‘ফেদাল’ যুগ শেষ হয়েছে আগেই। রজাজ ফেদেরার আর নেই টেনিসের সঙ্গে। বিগ ফোরের আরেকজন অ্যান্ডি মারে। ব্রিটিশ এই তারকাও অনেকটা অনিয়মিত। বাকি রইলেন কেবল সার্বিয়ান নোভাক জোকোভিচ। নাদালের শেষ সম্ভবত টেনিস কোর্টে একটা লম্বা যুগেরই অবসান ঘটিয়ে দেবে। ইঙ্গিত তো মিলেছে ফ্রেঞ্চ ওপেনে হারের পর। এখন কেবল আনুষ্ঠিকতার অপেক্ষা।