অবৈধ ইটভাটায় শিশু শ্রমিক, নজর নেই প্রশাসনের

প্রকাশিত: ৩:১৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪

নাটোর প্রতিনিধি:

নাটোরের গুরুদাসপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইটভাটায় শিশু শ্রমিক কাজ করছে। এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেই প্রশাসনের। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলাজুড়ে বছরের পর বছর চলছে এসব অবৈধ ইটভাটা।

সরকারি নীতিমালা ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে কৃষিজমি ও পৌরসভা এলাকার মধ্যে গড়ে উঠা ওই ইটভাটাগুলোতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।

এতে বনজ সম্পদ উজাড়ের পাশাপাশি কৃষিজমি ধ্বংস, ফসলহানি ও পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটছে মারাত্মক। উপজেলায় ১৩টি ইটভাটার মধ্যে ১১টি চলছে লাইসেন্স বিহীন। ধারাবারিষা ইউনিয়নের তাড়াশিয়া পাড়ায় জাহিদুল ইসলাম ও নাজিরপুর ইউনিয়নে তুলাধুনা এলাকায় অবস্থিত রানার ইটভাটায় পরিবেশের ছাড়পত্র থাকলেও তা গড়ে তোলা হয়েছে ফসলের মাঠে। সরকারি আইনে কৃষিজমি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলে তা গড়ে তোলা হয়েছে।

বেআইনিভাবে কৃষিজমির মাটি কেটে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইট। অন্যদিকে ভাটাগুলোতে কয়লার পাশাপাশি দেদারছে কাঠ পুড়িয়ে উজাড় করা হচ্ছে ফলদ-বনজ সম্পদ। ইটভাটার নির্গত ধোঁয়া-ছাই ফসলের ক্ষতিসহ পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করছে চরমভাবে। ভাটায় কাজ করানো হচ্ছে ৭ থেকে ১০ বছর বয়সের শিশু দিয়ে। যাদের হাতে খাতা কলমের পাশাপাশি খেলনা থাকার কথা, অথচ তারাও আজ শ্রমিক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়নে কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটা। সেখানে কয়লার পাশাপাশি খড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি কাঠ কেটে খড়ি তৈরি করতে জাকির সোনারের ভাটায় করাত কল বসানো হয়েছে। এসব অবৈধ ইটভাটায় শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে।

শিশু শ্রমিক নাম প্রকাশ না করে বলেন, তারা ১’শ ইট উল্টালে পায় দশ টাকা। তাতে সারাদিন কাজ করলে ৫ থেকে ৬শ’ ইট উল্টাতে পারে। এর বিনিময় পায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকরা পৌরসদরে গড়ে উঠা অবৈধ ইটভাটা গুলোতে ব্যবহৃত ইটবহনকৃত যানবাহনে শব্দ দূষণ, অমানবিক শিশু শ্রম থেকে শুরু করে পরিবেশের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরেন। এসব অবৈধ ইটভাটা পৌর এলাকার মধ্য থেকে দ্রুত অপসারণ এবং কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

গুরুদাসপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, পরিবেশের ছাড়পত্র কাউকে না দেওয়ায় লাইসেন্স নবায়ন করা সম্ভব হয়নি। কাঠ পোড়ানো হচ্ছে না, তবে আগুন দিতে কিছু খড়ি প্রয়োজন হয় তাই প্রথম কিছু খড়ি কেনা হয়েছিল।

নাটোরের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, গত বছর জরিমানা করা হয়েছে। যে সকল অবৈধভাবে গড়ে উঠা ইটভাটা রয়েছে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন, ইটভাটার বিষয়গুলো কঠোরভাবে দেখা হবে। দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।