অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে সময় নিয়েছিলেন জেফার, এরপর যে কারণে রাজি হোন

প্রকাশিত: ৪:২৭ অপরাহ্ণ, মে ৭, ২০২৪

বিনোদন ডেস্ক রিপোর্টঃ 

ক’দিন আগেও জেফার রহমান ছিলেন অগণিত শ্রোতার প্রিয় কণ্ঠশিল্পী। সেসব অনুরাগীর কাছে তিনি এখন প্রিয় অভিনেত্রীদেরও একজন। মাত্র একটি সিনেমা ‘লাস্ট ডিফেন্ডার অব মনোগামী’ তাঁকে তুলে ধরেছে ভিন্ন অবয়ব আর নতুন পরিচয়ে। ওলটপালট করে দিয়েছে ভাবনার জগৎ। তাই আগামী দিনের পথচলা নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হচ্ছে এই শিল্পীকে। নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে উঠে আসা নতুন পরিচয় ও ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে

“আমাকে সামনাসামনি দেখেই কি মনে হয়েছে, একে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া যায়? নাহ, বিষয়টা এমন নাও হতে পারে। মজার ছলে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও তো মনে হয় না। তাহলে কেন মনে হলো, গানের মতো আমাকে দিয়ে অভিনয়ও সম্ভব? এমন অনেক প্রশ্ন যখন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল, তখন ফারুকী ভাই (পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী) নিজেই বিষয়টা খোলাসা করেছিলেন।জানিয়েছিলেন, তাঁর মেয়ে ইলহাম নিয়মিত আমার গান শোনে। ‘ঝুমকা’ গানটা ওর ভীষণ পছন্দের। আর ইলহামের জন্যই তিশা (অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা) ও তাঁকে প্রতিদিন আমার গানের ভিডিও দেখতে হয়। নিয়মিত দেখতে দেখতেই মনে হয়েছে, গানের ভিডিও ছাড়াও পর্দায় আমাকে আলাদাভাবে তুলে ধরা যেতে পারে। যে গল্প নিয়ে কাজ করছেন, সেখানে একটি চরিত্র আছে, যার সঙ্গে আমাকে মিলিয়ে নেওয়া সম্ভব। এ নিয়ে তিশার সঙ্গেও কথা বলেছেন। এরপর দু’জনের মনে হয়েছে, একটা এক্সপেরিমেন্ট তো হতেই পারে। সে কারণেই আমাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া।” এক নিঃশ্বাসে এ কথাগুলোই বলে গেলেন কণ্ঠশিল্পী ও সময়ের আলোচিত অভিনেত্রী জেফার রহমান।

কার ডাকে সাড়া দিয়ে অভিনয় জগতে পা রেখেছেন, এও জানিয়েছেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘লাস্ট ডিফেন্ডার অব মনোগামী’ সিনেমার আগেও বেশ কয়েকবার প্রস্তাব পেয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি সিরিয়াসলি নেননি। জেফারের কথায়, ‘আমি গানের মানুষ, সেই সূত্রে মিউজিক ভিডিওতে পারফর্ম করি– সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু কোনো চরিত্র নিজের মধ্যে ধারণ করে অভিনয় করার কথা আদৌ ভাবিনি। তারপরও ফারুকী ভাইয়ের প্রস্তাবটা আমাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছিল। কেননা স্বনামধন্য এই নির্মাতার কাজ সম্পর্কে ভালোভাবেই জানি। অন্যান্য নির্মাতা থেকে তাঁর কাজের ধরন যেমন আলাদা, তেমনি আছে নিজস্বতার ছাপ। তাই প্রস্তাব পেয়ে মনে হয়েছিল, আমাকে অভিনয়ে প্রস্তাব দেওয়ার হয়তো ব্যতিক্রমী ভাবনা আছে। যদি তাই হয়, তাহলে প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া যেতেই পারে। পরে আবার এও মনে হয়েছে, প্রস্তাবে সায় দিলেই তো হবে না, আমাকে দিয়ে আদৌ অভিনয় সম্ভব কিনা– সেটাও ভাবতে হবে। তাই অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ফারুকী ভাইয়ের কাছে কয়েকদিনের সময় চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, বিষয়টি নিয়ে ভেবে তারপর সিদ্ধান্ত জানাব। অনেক ভাবনাচিন্তার পর শেষমেশ অভিনয়ের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলি।’ এরপরের ঘটনা জেফারের মুখে না শুনলেও কম-বেশি সবারই জানা।

নতুন লুক টেস্ট থেকে শুরু করে সিনেমায় কাজ করার প্রতিটি ধাপ তিনি সহজেই পেরিয়ে এসেছেন। চেনা অবয়ব থেকে সরে এসে দেখা দিয়েছেন ভিন্নরূপে। চঞ্চল চৌধুরীর মতো নন্দিত অভিনেতার বিপরীতে অভিনয় করে গেছেন সাবলীলভাবে। সেই সুবাদে শুধু আলোচনায় আসেননি, একই সঙ্গে জয় করেছেন অগণিত দর্শকের হৃদয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে জেফার বন্দনা। এখন কথা হলো, অভিষেক সিনেমা দিয়ে দর্শক প্রশংসা কুড়ানো জেফার কি আদৌ অভিনয়ে নিয়মিত হবেন, নাকি শখের বসে একটি কাজ করেছেন, আর কখনও অভিনয় জগতে পা রাখবেন না? উত্তরে জেফার বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও হয়তো এমন প্রশ্নের জবাব দেওয়া কঠিন ছিল। এখন মনে হচ্ছে, অবচেতন মনে এটাই চাওয়া ছিল যে পর্দায় নানারূপে নানা চরিত্রে নিজেকে তুলে ধরি। দর্শকের কাছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর অন্যরকম এক ভালো লাগায় মন ভরে গেছে। একই সঙ্গে বেড়ে গেছে অভিনয়ের ক্ষুধা। যাদের জীবন কাছ থেকে দেখা হয়নি, মনের গহিনের মানুষটি কেমন জানার সুযোগ পাইনি; তেমনই কিছু চরিত্রের সঙ্গে মিশে গিয়ে জীবনভ্রমণের ইচ্ছা বেড়েই চলেছে– যা শুধু অভিনয়ের মধ্য দিয়েই সম্ভব। তাই নিয়মিত না হলেও যখনই ভালো ও ব্যতিক্রমী গল্প, চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাব, দাঁড়িয়ে যাব ক্যামেরার সামনে। এখনও সেই সুযোগের জন্যই প্রহর গুনছি। যাতে করে পরিণত অভিনয়শিল্পী হয়ে উঠতে পারি।’

জেফারের এ কথা থেকে বোঝা গেল তাঁর অভিনয়ের ক্ষুধা কতটা বেড়ে গেছে। এখন কথা হলো, অভিনয়ের জন্য কণ্ঠশিল্পী জেফার হারিয়ে যাবেন না তো? এ প্রশ্নে জেফার হেসে বলেন, ‘যে গানের সূত্র ধরে নতুন পরিচয় তুলে ধরার সুযোগ পাওয়া, সেই গান থেকে দূরে সরে থাকা অসম্ভব।’