অর্থ আত্মসাৎ মামলায় ইস্টার্ন ব্যাংকের সেই কর্মকর্তার আরও ৩১ বছরের সাজা

প্রকাশিত: ৭:০৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২৩

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
গ্রাহকের হিসাব থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর করে আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা পৃথক মামলায় ইস্টার্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা ইফতেখারুল কবিরকে ৩১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় ব্যাংকটির গ্রাহক জাকির হোসেন বাপ্পী ও মাহমুদুল হাসানকে ১০ বছর করে এবং আবদুল মাবুদ ও সামিউল সাহেদ চৌধুরীকে ৬ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আবদুল মজিদ এ রায় দেন। রায়ে ইফতেখারুল কবিরকে আরও ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ বছর ৫ মাস সশ্রম কারাদণ্ড, জাকির হোসেন বাপ্পী ও মাহমুদুল হাসান প্রত্যেককে ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং আবদুল মাবুদ ও সামিউল সাহেদ চৌধুরী প্রত্যেককে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৮ মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
অ্যাডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু নিউজ পোস্টকে বলেন, রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে হাজির ছিলেন। রায় ঘোষণার পর আসামিদের সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার বিচারকাজে আদালত ১৩ জনের সাক্ষ্য নেন। মামলায় আসামীদের পক্ষে দুজন সাফাই সাক্ষী দেন।
এর আগে একই ধরনের পৃথক অভিযোগে দুদকের অন্য চারটি মামলায় ইফতেখারুল কবীরকে গত ৩০ জানুয়ারি ২৬ বছর, ১৩ ফেব্র“য়ারি ২৭ বছর, ১ জুন যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২২ জুন ২১ বছর কারাদণ্ড দেন চট্টগ্রামের একই আদালত।
দণ্ডপ্রাপ্ত ইফতেখার কবির নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন পূর্ব মাদারবাড়ি দারোগা হাট রোডের আলমগীর কবিরের ছেলে, জাকির হোসেন বাপ্পী নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানাধীন রামপুর বেপারি বাড়ির আবুল কাশেমের ছেলে, মাহমুদুল হাসান নগরীর খুলশী থানাধীন দক্ষিণ খুলশী এলাকার আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে, আবদুল মাবুদ নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন পূর্ব মাদারবাড়ি দারোগাহাট রোডের মৃত আবদুল মালেকের ছেলে এবং সামিউল সাহেদ চৌধুরী কোতোয়ালী থানাধীন মোমিন রোড ঝাউতলা এলাকার মৃত সফিউল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ইফতেখারুল কবিরকে দুদকের করা পাঁচটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। দণ্ডবিধির পৃথক সাতটি ধারায় এ সাজা দেওয়া হলেও সর্বোচ্চ হিসেবে ইফতেখার কবিরকে দুটি ধারায় ১০ বছর করে মোট ২০ বছর সাজা ভোগ করতে হবে বলে নিউজ পোস্টকে জানিয়েছেন আদালতে দুদকের পিপি অ্যাডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের প্রায়োরিটি ব্যাংকিং ম্যানেজার মো. ইফতেখারুল কবির নগরীর চান্দগাঁও শাখায় দায়িত্ব পালনকালে ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই থেকে প্রায়োরিটি গ্রাহক আবু সাঈদ ৯৫ লাখ টাকার জন্য এফডিআর করার টাকা দেন। কিন্তু ইফতেখারুল কবির জালিয়াতি করে একটি ভুয়া এফডিআর এডভাইস দেন। পরে আবু সাঈদের অরিজিনাল এফডিআরের টাকা অন্য আসামি জাকির, মাহমুদুল, আবদুল ও সামিউলের সহযোগিতায় আত্মসাৎ করেন।
পরবর্তীকালে পৃথক ঘটনায় গ্রাহকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের বেশ কয়েকটি এফডিআর কেলেঙ্কারির বিষয়ে জানতে পারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এরপর ব্যাংকটির অভিযোগ পেয়ে কমিশনের অনুমোদন নিয়ে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক মাহমুদা আকতার এ মামলা করেন। পরে তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ইফতেখারুল কবিরসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন বাদী তদন্ত কর্মকর্তা মাহমুদা আকতার।
২০২২ সালের ১১ মে বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। অভিযোগপত্রে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯-সহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়। পরে বিচার প্রক্রিয়া শেষে আজ মঙ্গলবার আদালত রায় ঘোষণা করেন। এ ধরনের বিভিন্ন গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ১১টি মামলা হয় ইফতেখারুল কবিরের বিরুদ্ধে।