অর্থ পাচারে নতুন আতঙ্ক বিট কয়েন
♦ লেনদেনে জড়িত ৭৫ জনের তালিকা গোয়েন্দাদের হাতে ♦ ১৫ জন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
মুদ্রা পাচারে নতুন আতঙ্ক ‘বিট কয়েন’ (ক্রিপ্টোকারেন্সি/ ভার্চুয়াল মুদ্রা)। শুধু মুদ্রা পাচার নয়, জঙ্গি অর্থায়নও হচ্ছে এই বিট কয়েনে। এমন ভয়ঙ্কর তথ্য এসেছে গোয়েন্দাদের কাছে। এসব তথ্য পেয়ে নড়েচড়ে বসেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বিট কয়েন নজরদারির আওতায় না আসায় বিগত কয়েক বছরে দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে বিপুল অঙ্কের টাকা।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাচার হয়ে যাওয়া টাকার বেশির ভাগই কালো টাকা। তবে অনেকে কালো টাকা বিট কয়েনের মাধ্যমে পাচার করে তা পুনরায় রেমিট্যান্স আকারে দেশে নিয়ে আসছেন। গ্রহণ করছেন সরকারি ২ শতাংশ প্রণোদনা। এক্ষেত্রে ক্যাসিনো ব্যবসায়ীরাই এ সুযোগ নিয়েছেন সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেছেন, বিট কয়েন কিংবা ভার্চুয়াল মুদ্রা অবৈধ কেনাবেচা। এতে লোকসানের কোনো রেকর্ড থাকে না। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা হচ্ছে। জি-২০ এর সম্মেলনেও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্যও চ্যালেঞ্জ। আন্তরাষ্ট্রীয় মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত বিভিন্ন সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘বিট কয়েন’ লেনদেনে জড়িত বাংলাদেশের ৭৫ জন নাগরিকের একটি তালিকা তৈরি করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এদের মধ্যে ১৫ জন রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে অনেক প্রভাবশালী। এই তালিকার কেউ কেউ তাদের কিছু প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে নিয়মিত বিদেশে পাচার করে যাচ্ছেন অনেকের কালো টাকা। আবার ওই কালো টাকা রেমিট্যান্স আকারে ফিরিয়ে নিয়ে এসে সরকারের ২ শতাংশের প্রণোদনা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তালিকার কেউ কেউ তাদের বিট কয়েনে টাকা ঢুকিয়ে দেশে হুন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করছেন। এ ছাড়া কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করেন এমন কেউ কেউ এবং বিদেশি এয়ারলাইনসের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত পাইলট ও ক্রু তাদের ক্ষমতা এবং সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার করে বিদেশে ডলার পাচারে সহায়তা করছেন। পরবর্তীতে এসব ডলার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ই-ওয়ালেটে ঢুকানো হচ্ছে। যদিও ইতিপূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারি করে বিট কয়েন বা ভার্চুয়াল মুদ্রাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার পুলিশ সুপার মহিউদ্দীন ফারুকীর নেতৃত্বে একটি দল ‘বিট কয়েন’ ব্যবসায় সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে আটজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মোবাইল ফোনে বিট কয়েনের কার্যক্রম সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পায় আভিযানিক দল। মামলা নম্বর-১২১। এর আগে মহিউদ্দীন ফারুকীর নেতৃত্বেই আরেকটি দল ওই বছর সেপ্টেম্বরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে বিট কয়েন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে আরও একজনকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে ওই দুটি মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। এ ব্যাপারে সিআইডির উপ-মহাপরিদর্শক ইমতিয়াজ আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। আমাদের একটি আলাদা টিম রয়েছে যারা ভার্চুয়াল মুদ্রা নিয়ে কাজ করে। অবৈধ কর্মকান্ডে অর্থায়ন কিংবা মুদ্রা পাচারে যারাই লিপ্ত তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। পুলিশ সুপার মহিউদ্দীন ফারুকী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশে ব্যবহৃত বিট কয়েনগুলোর ২৫ শতাংশ জঙ্গি অর্থায়নে ব্যবহার হচ্ছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে কাজ অব্যাহত আছে। জানা গেছে, বিট কয়েন কিংবা ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো ডিজিটাল অর্থের একটি রূপ যা সুরক্ষার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে বেনামে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সন্ত্রাসী অর্থায়ন, অবৈধ অস্ত্র, মাদক, কিলিং, হ্যাকিংয়ের মতো কর্মকান্ডের অর্থায়ন হচ্ছে বিট কয়েনের মাধ্যমে। ইন্টারনেট ক্রিপটোগ্রাফি ব্যবহার করে, স্পষ্ট তথ্যকে প্রায় অবিচ্ছেদ্য কোডে রূপান্তর করা হয় বিট কয়েনের প্রক্রিয়ায়। বিট কয়েন অ্যাকাউন্ট খুলতে কোনো থার্ড পার্টি ভেরিফিকেশনেরও প্রয়োজন হয় না। সর্বশেষ একজন গ্রাহককে দেওয়া হয় একটি ‘ইউজার নেইম’ ও আট ডিজিটের একটি পাসওয়ার্ড। বিট কয়েন সিস্টেমটি পরিচালনা হয় ব্লকচেইন পদ্ধতির মাধ্যমে। ডি-সেন্ট্রালাইজ নেটওয়ার্ক থাকায় এর ওপর নজরদারিও অনেক কঠিন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে একটি ‘বিট কয়েন ওয়ালেট’ অথবা ‘ই-ওয়ালেট’ খুলতে লাগছে সাড়ে সাত লাখ টাকা। নজরদারি এড়াতে অনেকেই ভিপ্যান (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) অথবা প্রক্সি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন। বর্তমানে বিশ্বে ২১ মিলিয়ন বিট কয়েন বাজারে আছে বলে ধারণা করা হয়। আরও ৬ মিলিয়ন বিট কয়েন বাজারে আনতে মাইনাররা চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিট কয়েনের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রায় সবকটি উন্নত দেশে লেনদেন করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে এবং ইউরোপের অনেক দেশেই বিট কয়েন বুথ রয়েছে। সেখান থেকে টাকা উত্তোলন করা যায়।