সাজ্জাদ হোসেন :
স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ২ হাজার ৩৪৯ জন শিক্ষার্থীকে সনদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর ২৪তম সমাবর্তন। বুধবার (৮ নভেম্বর) পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব এবং সনদ বিতরণ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সনদপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ হাজার ৮৬০ জন স্নাতক ও ৪৮৯ জন স্নাতকোত্তর পর্যায়ের। কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জনকারী দুই স্নাতক শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর্স গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলছি মডিউলার এডুকেশনের দিকে যেতে। আমি ডিগ্রি অর্জন করলাম, কিন্তু পাঁচ বছর পরে এ বিদ্যা আমার কাজে নাও লাগতে পারে। আমি তখন নতুন করে আরেকটা ডিগ্রি নেওয়ার জন্য ক্যাম্পাসে ফেরত আসতে পারবো না। সেজন্য ব্লেন্ডেড এডুকেশন মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। এর সুযোগ গ্রহণ করে আমাদের শিক্ষার্থীরা যার যার কাজের জায়গায় থেকেই নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করে নিতে পারবে। নিজেদের ক্রমাগত রি-স্কিল এবং আপ-স্কিল করতে পারবে শর্ট কোর্স, ডিপ্লোমা নানা কিছুর মাধ্যমে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তার এ প্রত্যয় বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি নাগরিক, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে স্মার্ট ভূমিকা পালন করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য প্রশাসন এবং অর্থনীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রকেই স্মার্ট করে তুলতে হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকেই স্মার্ট নাগরিক হয়ে ওঠার জন্য চৌকস ভূমিকা পালন করতে হবে।
সমাবর্তন বক্তা সেলিনা হোসেন বলেন, কোনো মানুষের জীবনই সহজ নয়। জীবন চলার পথও সরলরেখার মতো নয়। অনেক উঁচু-নিচু থাকে, উত্থান-পতন থাকে, খানাখন্দ থাকে, কখনো পাহাড় ডিঙিয়ে যেতে হয়, কখনো সমুদ্র পাড়ি দিতে হয়, নদী-নালা-খাল-বিল তো প্রচুর। অর্থাৎ, পথটা অত আরামদায়ক নয়, বরং প্রচুর ভোগান্তি পোহাতে হয়। ভয় পেয়ো না, এগুলো সবার জীবনেই থাকে। তোমরা যত বাধা-বিপত্তি পেরুবে, তত বেশি সাহসী এবং শক্তিশালী হবে।
আইইউবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, শিক্ষার্থীর ভূমিকা থেকে আজকে আপনারা নতুন এক ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন – তা হলো অ্যালামনাই। মনে রাখবেন, আইইউবির সঙ্গে এখানেই আপনাদের সম্পর্ক শেষ হচ্ছে না। বরঞ্চ আজ থেকে আরও বড় পরিসরে, আরও বড় মঞ্চে আপনারা আইইউবি পরিবারের সব অর্জন এবং সাফল্য নিয়ে গর্ব করার সুযোগ পাচ্ছেন। আমি আশা করবো আইইউবির আলোর মশাল আপনারা দেশে-বিদেশে সমুজ্জ্বল রাখবেন।
এডুকেশন, সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড কালচারাল ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট (ইএসটিসিডিটি)- এর চেয়ারম্যান মিসেস নিলুফার জাফরুল্লাহ বলেন, এবারের সমাবর্তনের অনেক শিক্ষার্থীই বিভিন্ন দেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমিয়েছেন। অন্যরাও নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। তাদের অনেকেই শিক্ষার্থী থাকাকালীন সময়ে ক্রীড়া ও অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রমে আইইউবির জন্য সম্মান বয়ে এনেছে। আমি আশা করবো আইইউবির বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীরাও তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করবে।
উপাচার্য অধ্যাপক তানভীর হাসান বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। আমাদের অর্থনৈতিক সাফল্য নিয়ে এখন সারা পৃথিবীতে কথা হয়। একটি দায়িত্বশীল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপকল্প ২০৪১-এর আওতাধীন টেকসই উন্নয়ন এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চলমান প্রক্রিয়ায় আইইউবি অবদান রেখে চলেছে। তারই অংশ হিসেবে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের উদার কলা বা লিবারেল আর্টস বিষয়ে একটি দৃঢ় ভিত্তি দেওয়ার চেষ্টা করি। পাশাপাশি আমরা তাদের প্রযুক্তিগত দিক থেকে দক্ষ, বৈশ্বিকভাবে সচেতন এবং পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করি।
অনুষ্ঠানে আইইউবির কোষাধ্যক্ষ খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দার ও পাঁচ অনুষদের ডিনরা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আইইউবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান। সমাবর্তন অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন আইইউবির রেজিস্ট্রার মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
ভ্যালেডিক্টোরিয়ান মনোনীত হন চ্যান্সেলর্স গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত লাইফ সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষার্থী সারাফ সাইয়ারা। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী এলিসেন ক্লডিয়া ডিয়াজও চ্যান্সেলরস গোল্ড মেডেল পান। অলরাউন্ডার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন স্যোশাল সায়েন্সেস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শুদ্ধা শ্রীময়ী দাশ। স্নাতক পর্যায়ে অসাধারণ ফলাফলের জন্য ওয়াসিউল হক, আসিমা কামাল মৌনী, নাওয়ার নেছার খান, লাবিবা ফাইরুজ, ফাতিমা সাধরী, রেজাউল খান আহাদ, তাজওয়ার বিন সালেহ এবং স্নাতকোত্তার পর্যায়ে অসাধারণ ফলাফলের জন্য মো. রিজানুল হক, মো. ইফতাদুল ইসলাম সাকিব, ফারলিনা আহমেদ, জাহানারা তারিক, মনিকা কবির ও মো. মেহেদি হাসানকে পুরস্কৃত করা হয়।
অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতির পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে সফল শিক্ষার্থীদেরও সম্মাননা দেওয়া হয়। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সম্মাননা পান এস. এম. শাহারিয়ার কবির, খেলাধুলায় ইনতিশার মোস্তফা চৌধুরী ও তানিন রহমান তুষার এবং সমাজসেবায় নুসরাত তানজিমা আহম্মেদ ও শারনিলা নুজহাত কবির।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইইউবির সম্মানিত ট্রাস্টিরা, অভিভাবক এবং আইইউবির শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। মূল অনুষ্ঠান শেষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় শিল্পী কণা এবং প্রীতম।