আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার নামে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারকচক্রের ৩ সদস্য গ্রেফতার

প্রকাশিত: ৬:০৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৯, ২০২৩

সাইফুল ইসলাম:

জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) কর্মকর্তা পরিচয়ে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ফোন করে এক প্রতারক বলেন, ‘আমি এনএসআইর ডিডি (ডেপুটি ডিরেক্টর) হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছি। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংক্রান্ত ইস্যুতে কাজ করছি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমি কয়েকজনকে বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এরই মধ্যে কয়েকজনের মনোনয়নের বিষয়টি আমি নিশ্চিত করছি। মোবাইল ফোনে এমন পরিচয়ে কথা বলে পরে আস্থা অর্জনের পর ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতাকে ওই প্রতারক বলেন, ‘আপনার মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এজন্য ৫০ লাখ টাকা নগদ দিতে হবে। এরপর ভুক্তভোগীকে প্রধানমন্ত্রীর কন্যা পুতুল নামে একজন নারী কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয় চক্রের সদস্যরা। আজ শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের টার্গেট করে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দেশব্যাপী সক্রিয় হয়। এর ধারাবাহিকতায় চক্রটি দেশের বিভিন্ন স্থানে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের টার্গেট করে। এভাবে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদে পা দেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচনে আওয়ামলী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী দীপক কুমার রায় (৬৩)। প্রতারকের ফাঁদে পড়ে ৫০ লাখ টাকা খোয়ান তিনি। পরে গত ২৬ নভেম্বর মনোনয়নপত্রের তালিকা চূড়ান্তভাবে প্রকাশ হলে সেখানে তার নাম না থাকায় ভুক্তভোগী বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতা দীপক কুমার রায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। গ্রেফতাররা হলেন- নুরুল হাকিম (৩১), হাসানুল ইসলাম জিসান (২২) ও মো. হারুন অর রশিদ (২৯)।

হারুন অর রশীদ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামিরা আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর গ্রেফতার নুরুল হাকিম নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর সচিব মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও অপর আসামি হাসানুল ইসলাম জিসান নিজেকে একান্ত সচিব-২ জয় মোর্শেদের পরিচয় দিয়ে তিনটি নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মনোনয়ন পাইয়ে দেবে বলে ফোন করেন।

ডিবিপ্রধান আরও বলেন, এরজন্য তাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা দিতেও বলা হয়। তবেই তারা মনোনয়ন পাবেন বলে জানায়। এছাড়া প্রতারক চক্রের সদস্যরা নিজেকে ঢাকা জেলার সমাজসেবা অধিদফতরে উপ-পরিচালক শেখ কামাল হোসেন এবং সাভার উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোহাম্মদ শিবলী জামান পরিচয়ে বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে বিভিন্ন সরকারি ভাতা কার্ড দেওয়া হবে বলেও তালিকা করার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতো। প্রতারক চক্রের সদস্য নুরুল হাকিমের বিরুদ্ধে তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, প্রতারণার শিকার হয়ে ভুক্তভোগী নিজেই অনুতপ্ত হয়েছেন। ভুক্তভোগী প্রতারণার শিকার হওয়ার পর প্রথমে বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানান। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি আমাদের দেখার জন্য বললে দুদিনের মধ্যে প্রতারকদের গ্রেফতার করি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকেই প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে শিকার হয়েছেন। তবে যারা আমাদের কাছে অভিযোগের মাধ্যমে জানিয়েছেন আমরা গুরুত্বের সঙ্গে প্রতারকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। এমন প্রতারণার শিকার আরও কেউ থাকলে আমাদের জানাবেন। অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।