সেলিনা আক্তার:
গত কয়েক দিনে বিমানে পণ্য রপ্তানির চাপ বেড়েছে। মূলত যেসব পোশাকশিল্পের মালিক সমুদ্রপথে জাহাজে পণ্য পাঠাতে পারছেন না, তারা নিরুপায় হয়ে আকাশপথ বেছে নিয়েছেন।
রপ্তানিকারকরা জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণে রাস্তাঘাটে ঝামেলা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে মালামাল ঠিকমতো পাঠানো যাচ্ছে না। সময়মতো পণ্য পাঠাতে বিদেশি ক্রেতার চাপ রয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই আকাশপথে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে।
অনেকেই ক্রেতা ধরে রাখতে সমুদ্রপথের পরিবর্তে লোকসান মেনে বাড়তি অর্থ গুনে বিমানযোগে মালামাল পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। এদিকে কার্গো, তথা উড়োজাহাজে করে পণ্য পরিবহনের ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে বলে রপ্তানিকারকেরা জানান। আকাশপথে তৈরি পোশাক, তাঁতপণ্য, চামড়াজাত দ্রব্য, জুতা, পাটজাত বিভিন্ন পণ্য, ওষুধ ও শাকসবজি বেশি রপ্তানি হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ পোশাকের চালান।
এদিকে, গত কয়েক মাসে উড়োজাহাজে পণ্য পরিবহনের ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আবার বাড়তি ভাড়া গুনেও সময়মতো গন্তব্যে পণ্য পৌঁছানো যাচ্ছে না। কারণ, এয়ার কার্গো, তথা পণ্যবাহী উড়োজাহাজের অভাব আছে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে ঢাকা থেকে ইউরোপের দেশগুলোতে এক কেজি পণ্য পাঠাতে বিমানভাড়া লাগত আড়াই থেকে তিন মার্কিন ডলার। এখন তা বেড়ে ছয় ডলার পর্যন্ত হয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় যেখানে কেজিপ্রতি সাড়ে চার থেকে পাঁচ ডলারেই মালামাল পাঠানো যেত, সেখানে এখন লাগে সাড়ে সাত ডলার।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিদেশি বিমান সংস্থাগুলোই আকাশপথে বেশি পণ্য পরিবহন করে। কিন্তু দেশে ডলার- সংকটের কারণে বিমান সংস্থাগুলো নিজেদের মূল প্রতিষ্ঠানে অর্থ নিতে পারছে না। এতে প্রায় ৩৩ কোটি ডলারের মতো এ দেশে আটকে গেছে।
নিজেদের মূল সংস্থায় অর্থ নিতে না পারায় ঢাকা থেকে অনেক বিমান সংস্থা কার্গো ফ্লাইট বা পণ্য পরিবহন কমিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, আগে কুয়েত এয়ারওয়েজ সপ্তাহে সাত-আটটি ফ্লাইটে পণ্য নিত।
এখন তা দুটিতে নেমেছে। ফ্লাই দুবাই তাদের ফ্লাইট কমিয়ে অর্ধেক করেছে। এ ছাড়া কাতার এয়ারওয়েজ, টার্কিশ এয়ারলাইনস ও সেভেনএল নামে তিনটি বিমান সংস্থা সপ্তাহে এক-দুটি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।
জানা গেছে, চাহিদা বাড়লেও পর্যাপ্ত ফ্লাইট মিলছে না। কার্গো ফ্লাইট কমার কারণে কয়েক মাস ধরে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন কমেছে। এই পথে আগে দৈনিক ৫০০-৫৫০ টন পণ্য পরিবহন হতো, এখন তা কমে ৩৯০-৪০০ টনে নেমেছে; অর্থাৎ আকাশপথে পণ্য পরিবহন ২০-২৫ শতাংশ কমেছে।
গত বছরের শেষ দিকে লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজে হামলার পর থেকে উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে জাহাজ চলাচল করছে। ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিন-চার দিন বেশি সময় লাগছে। তাই সিংগাপুর বন্দরেও কনটেইনারের প্রবাহ বিলম্ব হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ছোট জাহাজগুলোকে আগের চেয়ে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে এমনিতেই বিমানভাড়া বেড়েছে। এখন বাড়তি ভাড়া দিয়েও বিমানে জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণত তারা বিমান সংস্থাগুলোর কাছে স্পেস চাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রওনা দেওয়া যেত। এখন সাত দিনও অপেক্ষা করতে হয়।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিগুলোর ওয়্যার হাউস ও বিমানবন্দরে এখন প্রায় ২ হাজার টন মালামাল ক্রেতাদের কাছে পাঠানোর অপেক্ষায় পড়ে আছে।