ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহের মাঠে মাঠে সবুজের সমারোহ। জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রান্তিক চাষিরা শীতের আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। টানা বৃষ্টির পর জমির মাটি উর্বর থাকায় আগাম সবজি চাষ শুরু করেছেন অনেকে। ইতোমধ্যে এসব সবজি বাজারের অনেকটা চাহিদা পূরণ করতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটি, মধুহাটি, সাগান্না, হলিধানী, গান্না, হরিণাকুন্ডু উপজেলার দৌলতপুর, কাপাশাটিয়াসহ বেশকিছু ইউনিয়নের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, করলা, বেগুন, লাউ, পটল, বরবটি, পালন শাক, লাল শাকসহ বিভিন্ন আগাম শীতকালীন সবজি মাঠে চাষ হচ্ছে। কৃষকরা রোদে পুড়ে সবজির ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ অঞ্চলের মাঠে সারা বছরই সবজি চাষ হয়ে থাকে। এ কারণে এই এলাকাকে সবজি নগরী বলা হয়।জেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আগাম শীতকালীন সবজি চাষে কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও ভালো লাভ হওয়ায় প্রতি বছরই কৃষকরা এতে আরও আগ্রহী হচ্ছেন।
জেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যে মতে, জেলায় ৫ হাজার ৬০৯ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ১ হাজার ৫৪৫ হেক্টর, কালীগঞ্জ ১ হাজার ২০৮ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৮০৭ হেক্টর, মহেশপুরে ৭১০ হেক্টর, শৈলকুপাতে ৮৪৪ হেক্টর ও হরিণাকুন্ডুতে ৪৯৫ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হচ্ছে। এসব অঞ্চলে প্রকার ভেদে শীতকালীন সবজির মধ্যে মূলা, পালংশাক, লালশাক, লাউ, শিম, করলা, পুইশাকসহ বিভিন্ন সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে।সাধুহাটি এলাকার কৃষক মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা ১০ বছর আগে ইরি শিম চাষ করতাম। ওই শিম লাগানো হতো জৈষ্ঠি মাসে আর ধরতো কার্তিক মাসে। কিন্তু সেই জাতের শিম চাষ করে আমাদের লস হতো। এরপর আমরা কৃষি অফিসারদের মাধ্যমে জানতে পারলাম হাবিল শিম সম্পর্কে যে এটি দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ধরে। তখন থেকেই আমরা এই শিম চাষ করতে শুরু করলাম। এই জাতের শিম চাষ করে লাভও বেশি, বাজারে দামও বেশি। এ জাতের শিম চাষ করে আমরা অনেক লাভবান হয়েছি।
দৌলতপুর এলাকার কৃষক কুতুব উদ্দীন বলেন, আগাম শীতকালীন সবজি চাষে খরচ এবং পরিশ্রম একটু বেশি হয়। তবে সময়ের চেয়ে অসময়ে সবজি বিক্রি করে বেশি লাভ বেশি পাওয়া যায়। তাই আমরা এসব সবজি চাষ করি।
কৃষক মো. সিদ্দিক আলী বলেন, এ বছর ৩০ শতক জমিতে হবিল শিম চাষ করেছি। এই জাতের শিম চাষ করতে খরচ একটু বেশি হলেও ভালো দাম পাওয়া যায়। এছাড়াও বাঁধাকপি, ওলকপি এবং লাউ চাষ করেছি। এই সবজি চাষ করতে অনেক শ্রম দিতে হয়। আবার পোকামাকড়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া কৃষি অফিসের পরামর্শে আলোক ফাঁদ ও ফেরেমন ফাঁদ ব্যবহার করেও পোকা দমন করা হয়। সবমিলিয়ে আগাম শীতকালীন সবজি করতে অনেক খরচ পড়ে। তবে অসময়ে বাজারে এই সবজির চাহিদা থাকে অনেক। এ কারণে এই সবজিগুলো বাজারে উচ্চ দামে বিক্রি করা যায়। এ জন্য আগামা শীতকালীন সবজি চাষে আমাদের আগ্রহ বেশি থাকে।
সাধুহাটি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেজবাহ আহমেদ বলেন, সাধুহাটি ইউনিয়নের এই মাঠে গ্রীষ্মকালীন সবজি বা আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হতো না। আমরা কৃষি অফিসের মাধ্যমে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষকদের এই সবজি চাষে আগ্রহী করেছি। যাতে করে আগাম সবজি চাষ করে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা যায় এবং অসময়ে সবজি বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে কৃষকরাও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন। এ কারণে আমরা গ্রীষ্মকালীন শিম, আগাম শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের কারিগরি সহযোগিতাসহ পরামর্শ দিচ্ছি।ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ষষ্টি চন্দ্র রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝিনাইদহ জেলায় এ বছর ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন সবজি চাষ হচ্ছে। এসব সবজির মধ্যে আছে শিম, লাউ, মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি। বাজারে আগাম শীতকালীন সবজির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আবার সেগুলো বেশি দামে বিক্রিও করতে পারছে কৃষকরা। এতে কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও আগাম সবজি চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন। আগামী দিনে কৃষকরা যেন আগাম সবজি চাষে আরো আগ্রহী হয় সে ব্যাপারে আমাদের মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আশা করছি আগামীতে এই সবজি চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে।