নাটোর প্রতিনিধি:
প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার রাতেও মেয়ে মাইশাকে (৮) নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন শাহানারা বেগম (৩২)। শাহানারা বেগমের ঘুম আর ভাঙ্গেনি। টিনের ঘরটিতে লাগা আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে শাহানারার দেহ। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা গেছেন।
দগ্ধ মাইশাকে উদ্ধার করতে গিয়ে দগ্ধ হন মাইশার নানী ইয়াতুন নেছাও। ইয়াতুননেছা এখানো বেঁচে আছেন। তবে মারা গেছে শিশু মাইশা।
নাটোরের লালপুর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামে নিহত শাহানারার বাড়ি। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে নয়টার দিকে শাহানারা বেগমের ঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে।
জানা গেছে, শিশু মাইশার বয়স যখন এক বছর। শাহানারা বেগমের স্বামী শাহাদত হোসেন তখন মারা যান। মূলত এরপর থেকেই শাহানারা বেগম কন্যা মাইশাকে নিয়ে নওয়াপাড়ায় বিধবা মা ইয়াতুন নেছার বাড়িতে থাকেন।
স্থানীয়রা জানান, নওয়াপাড়া গ্রামে পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে শাহানারা বেগমের মা ইয়াতুন নেছার টিনের ঘরে তিনজন মিলে বসবাস করতেন। মঙ্গলবার রাতে মেয়ে শাহানারা ও নাতনি মাইশাকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন ইয়াতুন নেছা। রাত ৯টা নাগাদ আগুনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়লে ঘুম ভাঙ্গে তার। জেগে দেখেন তাদের শোবার ঘরখানা দাউ দাউ করে জ্বলছে। বাইরে বেরিয়ে যতক্ষণে চিৎকার করে লোক জড়ো করছিলেন, ততক্ষণে পুড়ে অঙ্গার মেয়ে শাহানারা ও নাতনি মাইশা। প্রতিবেশিরা আগুন নেভাতে ব্যস্ত ছিলেন। ঘুমের মধ্যেই পুড়ে মারা যান শাহানারা বেগম। দগ্ধ হয় নাতনি মাইশা। নাতনি মাইশাকে উদ্ধার করেত গিয়ে দগ্ধ হন ইয়াতুন নেছাও।
পুলিশ জানিয়েছে, দগ্ধ ইয়াতুন নেছা ও নাতনি মাইশাকে গুরুতর অবস্থায় লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে মাইশার অবস্থা সংকটাপন্ন হলে রাতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোরে মাইশা মারা যায়। ইয়াতুননেছা এখোনো লালপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
নিহত শাহানারা বেগমের চাচাতো ভাই নাহিদ হোসেন বলেন, একটি মাত্র ঘর ছিল ইয়াতুন নেছার। সেই ঘরের একপাশে শোবার ব্যবস্থা অপর পাশে চুলা ও শুকনা খড়ি পালা করে রাখা ছিল। তিনি মনে করেন, চুলা অথবা কুপিবাতি থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
লালপুর ফায়ার স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাব্বির আহমেদ বলেন, দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ায় ফায়ার-কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই একজন মারা যান। রাতেই আগুন নিয়ন্ত্রনে তারা। তিনি বলেন, আগুনের প্রকৃতি দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কুপি বাতি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
লালপুর থানার ওসি উজ্জ্বল হোসেন বলেন, অগ্নিকাণ্ড বা মৃত্যুর ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেননি। তাই ময়নাতদন্ত ছাড়াই মা-মেয়ের লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।