ডেস্ক রিপোর্ট:
জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে আজ সোমবার আজারবাইজানের বাকুতে বসছে জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলন কপ২৯ (কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ)।
এবারের আসরে ৭০ হাজারের বেশি প্রতিনিধির যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। চলবে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত। এবারও বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশ নেবে। আমূল বদলে যাওয়া এক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে।
বৈশ্বিক জলবায়ু রক্ষার বিশাল এ সম্মেলনে অংশ নিতে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ আজারবাইজানে যাচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ যেসব বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করছে, কপ২৯ জলবায়ু সম্মেলনে তার জন্য ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন তিনি। এ ছাড়া ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’, প্যারিস চুক্তির তহবিল এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুদের কথা বৈশ্বিক এই জলবায়ু সম্মেলনে উপস্থাপন করতে পারে বাংলাদেশ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে জানান, ড. ইউনূস ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত আজারবাইজানে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন। জলবায়ু সম্মেলনের বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য দেবেন তিনি। এ ছাড়া সেখানে অংশগ্রহণকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, সেটি তুলে ধরা হবে সম্মেলনে। এ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পূর্বাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা তুলে ধরা হবে। উন্নত দেশগুলো থেকে সবুজ প্রযুক্তিতে সহায়তা চাইতে পারে বাংলাদেশ।
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন শুরুর আগে বিবৃতিতে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশগুলোর জোট জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ঋণ হিসেবে যে অর্থ দেওয়া হচ্ছে, তাতে এলডিসি দেশগুলোর অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ১ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। যদি এই পরিমাণ অর্থ দেশগুলো না পায়, তাহলে এলডিসি দেশগুলোতে দুর্ভোগ বাড়বে।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে বন্যা ও ভূমিধসের কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ছাড়াও মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদ, ইথিওপিয়াসহ বিভিন্ন দেশ বন্যা ও ভূমিধসের মুখোমুখি হয়েছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশগুলো। বৈশ্বিক এ সংকট মোকাবিলায় সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা বাড়ানোর পাশাপাশি দেশগুলোর একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা আগের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব আহমদ শামীম আল রাজী বলেন, ঢাকাসহ বাংলাদেশের নগর কেন্দ্রগুলো তাপপ্রবাহ, বায়ুদূষণ এবং জলাবদ্ধতার কারণে তীব্র জলবায়ু হুমকির সম্মুখীন। টেকসই নগর উন্নয়ন এবং জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামোর ওপর কপ২৯-এ কার্যকর অংশগ্রহণ বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ এনে দিতে পারে।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা কমিয়ে একটি গ্রিন ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য কপ২৯ সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মঞ্চ। বাংলাদেশ এ সম্মেলনে নিজের ভবিষ্যৎ জলবায়ু ঝুঁকির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতা আশা করছে। জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার বাড়াতে এ সম্মেলনে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেগুলো সরাসরি দেশের জনগণের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলবে। কপ২৯-এ জলবায়ু অর্থায়ন ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার গ্রিন অর্থনীতির দিকে এক ধাপ এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে। সম্মেলনটি জলবায়ু অর্থায়ন এবং নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পগুলোর জন্য কার্যকর সমর্থন জোগাবে এবং ন্যায়সংগত একটি গ্রিন এনার্জি পরিবর্তনের দিকে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
আয়োজনকারী দেশের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জীবাশ্ম জ্বালানি চুক্তির অভিযোগ
কপ২৯-এর আয়োজক দেশ আজারবাইজানের এক কর্মকর্তা নতুন জীবাশ্ম জ্বালানি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। গোপনে ধারণ করা একটি ভিডিওতে সম্মেলনের আগে বিতর্কিত এ বিষয় উঠে এলো। রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল উইটনেস একটি ভুয়া কোম্পানি গঠন করেছিল। এ কোম্পানি আজারবাইজানের জাতীয় তেল ও গ্যাস কোম্পানি সোকারে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে। তারাই ওই ভিডিও ধারণ করেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বাকুতে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলা নিয়ে আলোচনার জন্য কপ২৯-এর সিইও এলনুর সোলটানোভ ওই ভুয়া তেল ও গ্যাস কোম্পানি ইসি ক্যাপিটাল ও সোকারের মধ্যে মধ্যস্থতা করিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ভিডিওতে সোলটানোভকে বলতে দেখা যায়, ‘আমাদের অনেক পাইপলাইন অবকাঠামো আছে। উন্নয়নযোগ্য অনেক গ্যাসক্ষেত্রও রয়েছে।’