আজিজের ২ ভাইয়ের পাসপোর্ট জালিয়াতি : ইসি ও পাসপোর্টে দুদকের চিঠি
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
মোঃ সাইফুল ইসলাম
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফের পাসপোর্ট জালিয়াতি খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (১০ জুন) দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২০, ২০২১ এর বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এ কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের দুই ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট জালিয়াতির ঘটনায় দুদক থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তবে দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি তিনি। যদিও গত ২৯ মে আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ শিডিউলভুক্ত হলে অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেবেন বলে জানিয়েছিলেন দুদক চেয়ারম্যান।
ওইদিন দুপুরে সাবেক সেনাপ্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের দুর্নীতি অনুসন্ধান করতে দুদকে আবেদন করেন সালাহ উদ্দিন রিগ্যান নামের একজন আইনজীবী।
সোমবার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুদক চেয়ারম্যান। এসময় দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক, মোছা. আছিয়া খাতুন, দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন, জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান মনজুরুল আহসান বুলবুলসহ বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, দুর্নীতি প্রমাণ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। দুদকের একার পক্ষে সব ধরনের দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা ব্যবস্থা নিলে এত অভিযোগ দুদকে আসত না। তাদের পক্ষ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে দুদকে অভিযোগ কম আসবে, দুদক এটাই চায়। সবক্ষেত্রে দুর্নীতি যেন না হয় তার জন্য প্রতিরোধ করা জরুরি। সাংবাদিকরা যে কাজ করে আর দুদক যে কাজ করে, এসব কাজে একে অপরের পরিপূরক।
২০২০ ও ২০২১ সালের জন্য প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিজয়ী ১২ জন সাংবাদিক দুদক চেয়ারম্যানের হাত থেকে ক্রেস্ট, সনদ ও আর্থিক সম্মানী গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক বলেন, সমাজে যাদের ক্ষমতা আছে তারাই দুর্নীতি করে। আপনারা সিআইপি, ভিআইপি যাদের সম্মান দিয়ে এগিয়ে আনতে যান তারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
তিনি বলেন, আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে তাদের মুখ উন্মোচন করতে হবে। সামাজিকভাবে তাদের বয়কট করতে হবে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাবানদের ভয় পেলে চলবে না। কালোকে সর্বদা কালো বলতে হবে, লেখনীতে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকতে হবে।
দুদক কমিশনার মোছা. আছিয়া খাতুন বলেন, ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য সুন্দর একটি প্রজন্ম রেখে যেতে হবে। এজন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, প্রতিযোগিতার জন্য জমা হওয়া প্রতিবেদনগুলোতে দুর্নীতির অনেক তথ্য-উপাত্ত এসেছে, সেগুলো দুদক আমলে নিয়ে অনুসন্ধান চালালে দুর্নীতিবাজরা আতঙ্কে থাকবে। একইসঙ্গে সাংবাদিকরা তাদের কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহিত হবেন।
প্রসঙ্গত, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ইসির একজন যুগ্ম-সচিবকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সম্প্রতি তাদের এনআইডি জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে ইসি বিষয়টি তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
অন্যদিকে, গত ২৯ মে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর করা ওই আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রিগ্যান বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এতে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। দেশের সাধারণ জনগণের সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস ক্ষুণ্ন করেছে।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় দুর্নীতি দমন কমিশন এত বড় অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ার পরও অনুসন্ধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। যা দুদকের নিষ্ক্রিয়তা। এ বিষয়ে যথাযথ অনুসন্ধানের উদ্যোগ গ্রহণ করে জানানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর বাংলাদেশের চিফ অব আর্মি স্টাফ ছিলেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। তার আগে ২০১২ সাল থেকে চার বছর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিজিবির নেতৃত্ব দেন তিনি।