নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
জনপ্রিয় পাকিস্তানি গায়ক আতিফ আসলাম। বিশ্বজুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তার অগণিত দর্শক-শ্রোতা। বাংলাদেশেও নেহাত কম নয় এই গায়কের ভক্তের সংখ্যা। প্রতিনিয়তই কনসার্টে গান গেয়ে শ্রোতা-দর্শক মাতান তিনি। চলতি বছরের এপ্রিলে রাজধানীর বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স মাঠে পারফর্ম করেন আতিফ। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই চলতি বছর দ্বিতীয়বারের মতো শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আতিফের কনসার্ট। ‘ম্যাজিক্যাল নাইট ২.০’ শিরোনামে কনসার্টটির আয়োজন করে ট্রিপল টাইম কমিউনিকেশনস। তবে এই কনসার্ট যেন চরম অব্যবস্থাপনা আর জনভোগান্তির উদাহরণ হয়ে রইল!আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই কনসার্টে আসা দর্শকেরা জানিয়েছেন আয়োজনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে চরম অব্যবস্থাপনা। আতিফ আসলাম মঞ্চে ওঠার পর লোডশেডিং, টিকিট কেটেও দর্শকের ভেন্যুতে প্রবেশ করতে না পারা, ভেন্যুর ফটকে হয়রানি, ধারণক্ষমতার বাইরে দর্শকসহ নানা অভিযোগ ছিল আয়োজক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এদিকে এই কনসার্টকে কেন্দ্র করে এদিন উত্তরা থেকে মহাখালী পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়, এতে করে বিমানবন্দরগামী ও বিদেশফেরত যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়- যা নিয়ে ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকেই।‘ম্যাজিক্যাল নাইট ২.০’ কনসার্টে প্রধান আকর্ষণ ছিলেন পাকিস্তানের আতিফ আসলাম। এদিনের পরিবেশনায় আরও ছিলেন বাংলাদেশের তাহসান, কাকতাল ব্যান্ড, পাকিস্তানের গায়ক আবদুল হান্নান। আয়োজকেরা জানিয়েছিল, বেশ কদিন আগেই কনসার্টের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। সঙ্গে এও জানিয়েছিল, ধারণক্ষমতার চেয়ে কম টিকিট বিক্রি করেছে তারা। তবে কনসার্ট ভেন্যুতে দেখা গেছে এর উল্টো চিত্র। ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি দর্শককে কনসার্ট উপভোগ করতে দেখা গেছে। আবার কনসার্ট উপভোগ করতে যারা টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন, তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের অভিযোগও উঠেছে আয়োজকদের বিরুদ্ধে।‘ম্যাজিক্যাল নাইট ২.০’ শিরোনামের কনসার্ট বিকেল চারটায় শুরুর কথা থাকলেও এদিন কনসার্ট শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর। ততক্ষণে দর্শকের দীর্ঘ সারি পৌঁছে যায় কাকলী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত। এতে উত্তরা থেকে মহাখালী পর্যন্ত পুরো সড়ক স্থবির হয়ে যায়। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বেশ বেগ পেতে হয় পুলিশ কর্মকর্তাদের।
ট্রাফিক গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার আবু সায়েম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাস্তার পরিস্থিতি ঠিক হতে রাত প্রায় তিনটা বেজে যায়। একের অধিক দর্শকদের লাইনের সঙ্গে টিকিট ছাড়া মানুষের কনসার্টে ঢোকার চেষ্টায় পুরো রাস্তা স্থবির হয়ে যায়। এর সঙ্গে পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় স্টেডিয়ামের সামনে বিশাল জটলা তৈরি হয়। আমাদের টিমকে বেশ হিমশিম খেতে হয়। আয়োজকদের এসব বিষয়ে ভাবার দরকার ছিল। লাইনগুলো ঠিক রাখলে এ অবস্থা হতো না।’
আতিফ আসলাম যখন মঞ্চে ওঠেন, তখন রাত পৌনে ৯টা। ওঠার পরপরই লোডশেডিংয়ের কারণে ধাক্কা খান তিনি। ২০ মিনিট বিরতির পর গাওয়া শুরু করেন, একটানা গাইলেন তিন ঘণ্টা। ‘ম্যাজিক্যাল নাইট ২.০’ শীর্ষক কনসার্টের টিকিট বিক্রি হয়েছে ম্যাজিক্যাল জোন, ফ্রন্ট জোন ও জেনারেল- এই তিন ক্যাটাগরিতে। ম্যাজিকেল জোনের টিকিটের মূল্য রাখা হয় ১০ হাজার টাকা।
আতিফ আসলামকে কাছ থেকে দেখতে এদিন রাজধানীর মিরপুর–১১ নম্বর থেকে পরিবারসহ কনসার্টে আসেন রবিন মাহমুদ। পরিবারের চার সদস্যের জন্য তিনি খরচ করেছেন ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু মঞ্চের সামনে নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাসেবক ও দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকের কারণে কিছুই দেখতে পারেননি। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘টিকিট বিক্রি পর্যন্ত আয়োজকদের পাওয়া যায়। এরপর তারা লাপাত্তা। পরিবার নিয়ে গেটে হয়রানির শিকার হয়েছি। এত টাকা খরচ করেও কিছুই দেখতে পাইনি। এ আয়োজন নিয়ে চরম বিরক্ত আমরা। দেশ–বিদেশে অনেক আয়োজন দেখেছি, কিন্তু এখানে যা হলো, তা স্রেফ প্রতারণা।’এদিন টিকিট সংগ্রহ করেও কনসার্টে ঢুকতে পারেননি দুই শতাধিক দর্শক। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে বিষয়টি নিয়ে দর্শকেরা প্রশ্ন করলে তারা জানান, আয়োজক থেকে নির্দেশনা পেয়েই গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কনসার্টে ঢুকতে না পেরে ফিরে গেছেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘জীবনের সব ধরনের অভিজ্ঞতা দরকার, আজকে নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। আমাকে রিসিভ করার জন্য ভেতরে লোকজন ছিল, কিন্তু দায়িত্বরত ব্যক্তিদের তা জানানো সত্ত্বেও তারা আমাকে কনসার্টে ঢুকতে দেয়নি। এখন আমি জানি না তাদের প্রশংসা করব, না নিরাপত্তা নিয়ে দুঃখবোধ করব।’
কনসার্টের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ফেসবুকে আয়োজকদের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়েন চিত্রনায়িকা প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। তবে কিছুক্ষণ পরই তিনি তার ফেসবুক পোস্টটি সরিয়ে নেন।