
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় গত একযুগ ধরে বন্যহাতির তাণ্ডবে প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জনের অধিক মানুষ। আহত হয়েছেন শতাধিক। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই দ্বন্দ্ব নিরসনে এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিগত এক যুগ আগে থেকে বন্যহাতির দল আনোয়ারার কেইপিজেড এলাকায় আসতে শুরু করে। সেসময় কয়েক দিন ঘুরেফিরে হাতিগুলো চলে গেলেও গত বছর পাঁচেক ধরে হাতিগুলো কেইপিজেড, দেয়াংপাহাড়ের বটতলী এলাকায় বসবাস শুরু করে। পাহাড় থেকে হাতিগুলো কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠানের দৌলতপুর, দক্ষিণ শাহমীরপুর এবং আনোয়ারার গুয়াপঞ্চক, বৈরাগ, মোহাম্মদপুর, ফকিরখিল, বটতলী, হাজিগাঁও, গুচ্ছগ্রামে নেমে বিগত ছয় বছর ধরে তিন শতাধিক পরিবারের বসতঘর ভাঙচুর ও শত শত একর ফসলের ক্ষয়ক্ষতি করেছে।
হাতিগুলোকে কেইপিজেডের লেকে গিয়ে কিংবা চলাচলের পথে উত্ত্যক্ত করছে স্থানীয় কিছু কনটেন্ট ক্রিয়েটর। অনেক সময় এসব হাতির সাথে সেলফি নিতেও দেখা যায় অনেককে। যার ফলে বিরক্ত হয়ে হাতিগুলো হামলার মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে বলেও ধারণা অনেকের।
কেপিজেড সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলার ঐ এলাকায় বর্তমানে ৪৭টি কারখানায় প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাদের অনেককে হেঁটে কারখানায় যাতায়াত করতে হয়। এ সময় তারা হাতির ভয়ে থাকেন। বিশেষ করে সন্ধ্যা নামলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ঐসব কারখানায় কর্মরত বিদেশি নাগরিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, কারখানার শ্রমিক ও নিরাপত্তা প্রহরীরাও ভুগছেন আতঙ্কে। হাতির পাল যে কোনো সময়ে কোরিয়ান ইপিজেডের কারখানায় আক্রমণ করে ক্ষতিসাধন করতে পারে বলে কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছেন।
কেএসআইয়ের নারী শ্রমিক ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘ছুটি শেষে বাসায় ফেরার সময় ভয়ে ভয়ে যেতে হয়। না জানি কখন হাতি চলে আসে! দীর্ঘদিন ধরে হাতির এ তাণ্ডব চললেও প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। রাতের বেলায়ও শঙ্কায় থাকি কখন বাড়িতে হাতির পাল হানা দিচ্ছে।’
স্থানীয় ফরহাদুল ইসলাম নামের এক যুবক বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর হাতির দল এলাকার অলিতে-গলিতে ঘোরাঘুরি করে। এ সময় সামনে যাকেই পায় তাকেই তারা আক্রমণ করে। হাতির বিষয়ে সুষ্ঠু পদক্ষেপের জন্য মানববন্ধন, বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদানসহ সব ধরনের কাজ করেছি।
বন বিভাগের বাঁশখালী জলদী রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, কেইপিজেড সৃষ্টির আগে এই এলাকায় হাতি থাকার মতো কোনো পরিবেশ ছিল না, পানি ছিল না। আগে কখনো হাতি গেলেও হয়তো ঘুরে চলে গেছে। তবে বিগত ১০-১৫ বছর ধরে কেইপিজেডে হাতির যাতায়াত শুরু হয়েছে। এলাকাটি এখন পানি ও গাছপালা সমৃদ্ধ। অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় হাতিগুলো এখানে স্থায়ী হয়েছে। আর হাতির স্বভাবজাত বিষয় হলো দৈনন্দিন একটি হাতিকে ৭০-৮০ কিলোমিটার হাঁটতে হয়। তাই দিনের বেলায় লোকজনের কারণে হাতি বের না হলেও রাতে হাতিগুলো কেইপিজেড থেকে বের হয়ে হাঁটাহাঁটি করে। এসময় তারা বিভিন্ন খাদ্য আহার করে। হাঁটারসময় হাতিগুলো কোনো রকম বাধার সম্মুখীন হলে তখনই তারা স্থানীয়দের ওপর হামলা করে।
আনোয়ারা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার জানান, ‘আনোয়ারার হাতির বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর’। প্রায় সময় হাতির আক্রমণে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে শোনা যায়। আমরা প্রতিবারই বিষয়টি বন বিভাগকে জানাই। বন্যপ্রাণীর বিষয়গুলো বন বিভাগের আওতাধীন। তারা এবিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন। এক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।