ডেস্ক রিপোর্ট:
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার উচিত জবাব দেওয়ার অধিকার রয়েছে ইরানের। দেশটি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন মেনেই হামলার জবাব দেওয়া হবে। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি গত সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে এই হুঁশিয়ারি দেন। ইরানে ইসরায়েলের বিমান হামলার বিষয়টি বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় ছিল।
এদিকে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, শেখ নাঈম কাসেম হিজবুল্লাহর প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালালে ভয়াবহ পরিণতির ব্যাপারে ইরানকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
নিরপাত্তা পরিষদের বৈঠকে ইরানের দাবি, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ইসরায়েলের হামলা সফলভাবে প্রতিহত করেছে তেহরান। ইসরায়েল কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। বৈঠকে ইরানের রাষ্ট্রদূত ইরাভানি বলেন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে সুবিধাজনক সময়ে ইসরায়েলের আগ্রাসী পদক্ষেপের জবাব দেওয়ার অধিকার রয়েছে ইরানের। জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদে এ অধিকারের বিষয়টি উল্লেখ আছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইন মেনেই ইসরায়েলি হামলার জবাব দেবে তেহরান। তিনি ইসরায়েলি আগ্রাসনকে ‘আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদের লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেন। ইরানি রাষ্ট্রদূত বলেন, ইসরায়েলের আগ্রাসী আচরণ পশ্চিম এশিয়াকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ। এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতামূলক আচরণে হতাশা প্রকাশ করেন ইরাভানি।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে সতর্ক করে বলেছে, তেহরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার পদক্ষেপ নিলে পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, আমরা আত্মরক্ষায় কাজ করতে দ্বিধা করব না। যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো উত্তেজনা দেখতে চায় না। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধের সমাপ্তি হওয়া উচিত।
হিজবুল্লাহর নতুন নেতা শেখ নাঈম কাসেম এর আগে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির ডেপুটি প্রধান ছিলেন। গত মাসের শেষের দিকে ইসরায়েলি বাহিনীর অতর্কিত হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ। এখন থেকে নাঈম কাসেমই হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেলের পদ সামলাবেন।
শেখ নাঈম কাসেম ১৯৫৩ সালে বৈরুতে জন্মগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন লেবানিজ শিয়া আন্দোলন শিয়া আমল মুভমেন্টের সঙ্গে। হাসান নাসরাল্লাহ জীবিত থাকাকালেই ৭১ বছর বয়সী নাঈম কাসেমকে হিজবুল্লাহর ‘দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হতো। তিনি ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে গোষ্ঠীটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও। তিনি ১৯৯১ সালে তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আব্বাস আল-মুসাভির আমলে হিজবুল্লাহর উপপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন।
ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা গতকাল দক্ষিণ ইসরায়েলে একটি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। হুতি সামরিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের শিল্পাঞ্চলকে লক্ষ্য করে সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। এর আগে হুতিরা তেল আবিবের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। পরে ইসরায়েলি বাহিনী ইয়েমেনে পাল্টা হামলা চালায়।
এদিকে ইসরায়েলি হামলায় লেবানন থেকে পালিয়ে আশা শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে ইরাক। এ পর্যন্ত ১৯ হাজারের বেশি লেবানিজ শরণার্থী দেশটিতে আশ্রয় নিয়েছে। বাগদাদ সরকারে ইরানপন্থি দলগুলোর আধিপত্য রয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তারা কঠোর অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেছে। প্রয়োজনে তারা অস্ত্র সরবরাহও দেবে। খবর এএফপি, রয়টার্স ও আলজাজিরার।