আবারও বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে ব্যাংক ঋণের সুদহার

প্রকাশিত: ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ, মে ৮, ২০২৪

সেলিনা আক্তারঃ

ব্যাংক ঋণের সুদহার আবার বাজারভিত্তিক ব্যবস্থায় চলে আসছে। এ বিষয়ে আজ বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেবে। সূত্র জানিয়েছে, চলতি বা আগামী মাস থেকেই তা কার্যকর হবে।সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ঋণের সুদহার দ্রুতই বাজারভিত্তিক হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। যা আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজের শর্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

গভর্নর বলেছেন, বর্তমানে রেফারেন্স রেট অনুসারে ব্যাংকের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে। শিগগিরই এটি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সুদহার নির্ধারণের ব্যবস্থাটি একটি অন্তর্র্বতীকালীন ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারণে ব্যাংকের স্বাধীনতা থাকবে। এখন যে সুদহার চলছে তা থেকে আর বেশি বাড়বে না।সুদহার নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন একটি নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করছে। এর ফলে ঋণের সুদ এখন প্রতি মাসেই বাড়ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ছিল ১২.৪৩ শতাংশ। মার্চে তা বেড়ে হয় ১৩.১১ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, আজ ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকে এ বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হবে। সেখানে কবে থেকে ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করা হবে তার ঘোষণা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এতে করে স্মার্ট সুদহার আর থাকছে না। বাজারে সুদহার কমলে গ্রাহক কম সুদে ঋণ পাবে, আবার বাড়লে বেশি সুদে ঋণ নিতে হবে।

এর আগে ঋণের ওপর সর্বোচ্চ সুদের হার নির্ধারিত ছিল ৯ শতাংশে। গত জুলাই মাসে সুদের হার বেঁধে দেওয়ার ঐ পদ্ধতি থেকে সরে আসে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল বা স্মার্ট পদ্ধতিতে ঋণের সুদের ভিত্তি হার নির্ধারিত হয়। এই ভিত্তি হারের সঙ্গে এর আগে বাড়তি ৩.৫০ শতাংশ সুদ যুক্ত হলেও এবারে বাংলাদেশ ব্যাংক ৩ শতাংশ সুদ যোগ করার জন্য বলেছে। ভিত্তি হার ও বাড়তি সুদ এই দুইয়ে মিলে ঋণের চূড়ান্ত সুদহার নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলো। মার্চ মাস শেষে স্মার্ট হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০.৫৫ শতাংশে। এর সঙ্গে ৩ শতাংশ সুদ যুক্ত করলে ঋণের সুদ দাঁড়ায় ১৩.০৫৫ শতাংশ।

উদ্যোক্তারা বলেছেন, ঋণের সুদ হার যেভাবে বাড়ছে তাতে ব্যবসা খরচ আরও বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ডলারের দামও চড়া। সব মিলে আমদানি পণ্যের দাম আরও বাড়বে। এতে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার থেকে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর সুফল কতটুকু মিলবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা। এদিকে সুদহার বাড়ানোর ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ কিছুটা কমেছে। তবে এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কমে গেছে। নতুন শিল্প স্থাপন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এবার আইএমএফ মোটাদাগে কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া, রাজস্ব আহরণ আরেকটু বাড়ানো ও সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে আনা। সরকারও আইএমএফের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নীতি গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রগুলো জানিয়েছে, আইএমএফের পরামর্শ মানা হলে সুদহার নির্ধারণের বর্তমান পদ্ধতি স্মার্ট বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল বাতিল হয়ে যাবে। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ভিত্তিতে বর্তমানে ঋণের সুদহার নির্ধারণ হচ্ছে।

এদিকে, নয়-ছয় সুদের সীমা তুলে দেওয়ার পর থেকে সব ধরনের ঋণ ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। প্রতি মাসে বাড়ছে ঋণের সুদ। তবে যে গতিতে ঋণের সুদ বাড়ছে, সেই গতিতে আমানতের সুদ বাড়াচ্ছে না অধিকাংশ ব্যাংক। গত ৯ মাসে ঋণের গড় সুদহার যেখানে ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে, সেখানে আমানতের সুদহার বেড়েছে ১ শতাংশেরও কম। এতে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) ব্যাপক হারে বাড়ছে। ইতিমধ্যে গড় স্প্রেড ৫ শতাংশ অতিক্রম করেছে। এই হার অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি।