আমার স্ত্রীর তো কোনো দোষ ছিল না, আমার সন্তানদের এখন কে দেখবে?

প্রকাশিত: ৬:১৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২৩

আমিনুল ইসলাম বাবু:
গাজীপুরে আন্দোলনরত পোশাকশ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে আঞ্জুয়ারা খাতুন নামের এক নারী গুলিতে নিহত হয়েছেন। নিহত এ পোশাকশ্রমিক মাত্র দেড় মাস আগে চাকরিতে যোগ দেন। এর মধ্যে আজ বুধবার (৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সংঘর্ষের এ ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।


আঞ্জুয়ারা খাতুনের স্বামী জামাল বাদশা নিউজ পোস্টকে বলেন, আমার স্ত্রী তো একজন সাধারণ গার্মেন্টস কর্মী ছিল। সে তো আন্দোলনে যায়নি। তার তো কোনো দোষ ছিল না। তাকে কেন পুলিশ গুলি করে মারল? কথাগুলো বলতে বলতে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের মর্গে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত গার্মেন্টস কর্মী আঞ্জুয়ারা খাতুনের স্বামী জামাল বাদশা।


কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী আঞ্জুয়ারা ইসলাম গার্মেন্টসে চাকরি করত। আমি আলাদা একটি গার্মেন্টসে চাকরি করি। গতকাল মঙ্গলবার সরকার বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ হয়। আজ সকালে আবারও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে। এর মধ্যে গার্মেন্টস ছুটি ঘোষণা করে। আঞ্জুয়ারা গার্মেন্টস থেকে বের হয়ে চৌরাস্তার জরুন এলাকায় এলে পুলিশ গুলি করে।’


বিলাপ করতে করতে নিহতের স্বামী জামাল বাদশা বলেন, প্রতিদিনের মতো আজ সকাল ৭টার দিকে কাজে যোগদান করেন আমার স্ত্রী আঞ্জুয়ারা খাতুন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনের সময় আমার স্ত্রী নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য কারাখানা থেকে বেরিয়ে বাসায় আসার কোনো গলি খুঁজে না পাওয়ায় এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। তখন ইসলাম গার্মেন্টসের সামনে পুলিশের ছোড়া গুলি গুলি তার মাথায় এসে লাগে। ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল আমার স্ত্রী আঞ্জুয়ারা খাতুন।

এ সময় জালাল নামের একজন গুরুতর আহত হন। পরে সহকর্মীরা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে তারাতারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসি। এ সময় কর্তব্যরত ডাক্তার আমার স্ত্রী আঞ্জুয়ারা খাতুনকে মৃত ঘোষণা করেন ও জালালকে জরুরি বিভাগে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার মৃত্যুর খবরে হাসপাতালের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন জামাল বাদশা।


কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। আঞ্জুয়ারার মৃত্যুতে সন্তানদের নিয়ে আমি এখন গভীর দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। বার বার কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানদের এখন কে দেখবে?।’


জানা গেছে, নিহত আঞ্জুয়ারা খাতুন কোনাবাড়ী জরুন এলাকার ইসলাম গার্মেন্টস-২ এর সেলাই মেশিন অপারেটর পদে চাকরি করতেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানার চরগিরিশ এলাকায়।


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে নিউজ পোস্টকে বলেন, নিহত পোশাককর্মী আঞ্জুয়ারা খাতুনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে।