আমি এসব থেকে মুক্তি চাই: তারিক আনাম

প্রকাশিত: ৫:২০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩০, ২০২৫

বিনোদন ডেস্ক:

 

থিয়েটার আর্ট ইউনিটের নতুন নাটক ‘বলয়’-এর উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়ে গেল গত ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে। নাটকটির পাণ্ডুলিপি, পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মোকাদ্দেম মোরশেদ। নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়নকালে হলের লবিতে একটি ইনস্টলেশন দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। ‘বলয়’ নাটকটি এগিয়ে গেছে মূলত তিনটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে। এঁরা হলেন– রাজনীতিক, বিজ্ঞানচিন্তক ও ধর্মতাত্ত্বিক। তারা গেছেন মনোবিশ্লেষকের কাছে কাউন্সিলিংয়ের জন্য। কারণ, তাদের উপলব্ধি, তারা একটি বলয়ের মধ্যে আটকে গেছেন । হাঁপিয়ে উঠেছেন তারা, বলয় থেকে মুক্ত হতে চান।

বিজ্ঞান-ধর্ম-রাজনীতির কথা, যুক্তির পিঠে যুক্তি, যুক্তি খণ্ডন, আস্থা-অনাস্থা অনুভবের কথা, তারা ফিরে যান তাদের আপন সত্তায়। নিজের সঙ্গেই নিজের কথোপকথন। নাট্যকারের ভাষায় এটি অন্তর্দ্বন্দ্বের নাটক। একটি চক্র, একটি বলয় ঘিরে রেখেছে আমাদের প্রত্যেককে। সামাজিক বলয়, রাজনীতির বলয়, ধর্মীয় বলয়, যুক্তি-অযুক্তির বলয়, ক্ষমতার বলয়, শোষণের বলয়, শাসকের বলয়। বলয়বৃত্তে ছটফট করা প্রাণ ছুটে যেতে চায়, মুক্ত হতে চায়; হয়তো ছুটে যায়ও কিন্তু পড়ে যায় আরেক বলয়ে।

সংলাপই এ নাটকের প্রাণ। চমৎকার অর্থপূর্ণ সংলাপগুলো দর্শককে নাড়া দিয়ে যায়, জাগিয়ে তোলে কিছু প্রশ্ন অথবা অনুসন্ধানের ইচ্ছা। এ কনটেম্পোরারি অন্তর্দ্বন্দ্বের নাটকটি যেন নিজেকেই নিজে বিশ্লেষণ করে দেখিয়ে দেয় নানান অসংগতি, অযুক্তির বলয়ে আমাদের বসবাস। গল্পের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সেট, আলো, আবহ, অভিনয় দক্ষতা এবং সর্বোপরি ডিরেক্টোরিয়াল ওয়ার্ক নাটকটিকে অর্থবহ করে তুলেছে। বলয় নাটকটিকে থিয়েটার আর্ট ইউনিটের একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রযোজনা বলা যেতে পারে। রাজনীতিক বিজ্ঞানচিন্তক ধর্মতাত্ত্বিক চরিত্রে যথাক্রমে– সেলিম মাহবুব, স্বাধীন শাহ্, রেজাউল আমিন সুজনের দুর্দান্ত অভিনয় দর্শকদের নজর কেড়েছে। মনোবিশ্লেষক চরিত্রে নাহিদ সুলতানা লেমন উতরে গেছেন। দর্শনার্থী এবং অমৃতা চরিত্রে রূপদানকারী রানা সিকদার ও মাহমুদা সুলতানা ভাবনার অভিনয় উপস্থাপনের আরও সুযোগ আছে বলে মনে হয়। আরেকটি ইন্টারেস্টিং চরিত্র মানসিক রোগী, তিনি একজন পিটিএসডি। যে চরিত্র আমজনতার পক্ষে কথা বলে, তাঁর কথাই যেন আমজনতার কথা। চরিত্রের রূপদানকারী হাসনাত প্রদীপ তাঁর অভিনয়শৈলী দিয়ে দর্শকের নজর কেড়েছেন।

নাট্যকার, নির্দেশক মোকাদ্দেম মোরশেদ বলেন, রাজনৈতিক বলয়সহ সামগ্রিক পারিপার্শ্বিক বলয়ের একটা স্থানান্তর ঘটেছে। এক বলয় থেকে অন্য বলয়ে আমরা স্থানান্তরিত হয়েছি। বলয় কিন্তু রয়েই গেছে। বলয় থেকে বলয়ে গমন অথবা আটকেপড়া বলয়ে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের স্পন্দন, অনুকূলে বা প্রতিকূলে মুক্তিহীন বলয়বন্দি বহমান এই জীবন– এ উপলব্ধিই ‘বলয়’ নাটকের চিন্তা সূত্র। এতে আছে চরিত্রের স্ববিরোধী অবস্থান; নিজেকেই নিজে বিশ্লেষণ করার একটি ইচ্ছা। দলের ৪০তম প্রযোজনাটির আবহ পরিকল্পনায় সেলিম মাহবুব, আলোক পরিকল্পনায় সুদীপ চক্রবর্তী। থিয়েটার আর্ট ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক এবং প্রযোজনা অধিকর্তা কামরুজ্জামান মিল্লাত বলেন, এস এম সোলায়মানের ভাব ও আদর্শে প্রতিষ্ঠিত নাট্যদল সব সময় নাটকের মধ্য দিয়ে মানুষের কথা মানুষের সামনে বলেছে। নাটক বলয়-এ মানবজীবনের সংকটকে চিনে নিয়ে সম্ভাবনার দুয়ার খোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত। থিয়েটার আর্ট ইউনিটকে অভিনন্দন চমৎকার একটি প্রযোজনা উপহার দেওয়ার জন্য, বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় মৌলিক নাটকের যাত্রা অব্যাহত থাকুক।