অন্তঃসত্ত্বা নারীদের আমেরিকার ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। সন্তান জন্ম দিয়ে আমেরিকার নাগরিকত্ব পাওয়া বন্ধ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ২৩ জানুয়ারি মার্কিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। অন্যদিকে নতুন করে আরও কয়েকটি দেশের ওপর আমেরিকায় ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে। নতুন আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কবলে বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমারের নামও রয়েছে বলে জানা গেছে।
আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমেরিকায় ভ্রমণে আসা নারীদের বেলায় নতুন নির্দেশনা জারি করছে। এ নির্দেশনায় আমেরিকায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে যেকোনো নারীকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা নন। আমেরিকার ভিসা গ্রহণের ক্ষেত্রে এ এক নতুন উদ্যোগ। বিদ্যমান নিয়মে ভিসা আবেদন বা জিজ্ঞাসাবাদে কনস্যুলেট কর্মকর্তারা কখনো কোনো ভিসা আবেদনকারী অন্তঃসত্ত্বা কি না, তা জিজ্ঞাসা করেন না। এখন থেকে বিষয়টি কীভাবে ঠিক নিশ্চিত করা হবে, তার বিস্তারিত নির্দেশনা আসছে। বার্থ ট্যুরিজম বা সন্তান জন্ম দিয়ে আমেরিকার নাগরিকত্ব পাওয়ার ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাটি বন্ধ করার জন্য এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে মিয়ানমার, বেলারুশ, ইরিত্রিয়া, কিরগিজস্তান, নাইজেরিয়া ও তানজানিয়ার জনগণের আমেরিকায় প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ/সীমিত করার কথা ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন। আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এমন নির্দেশ শিগগিরই জারি করা হচ্ছে বলে হোয়াইট হাউসের বরাত দিয়ে জানিয়েছে দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তর কোরিয়া ও মুসলিম অধ্যুষিত সাত দেশের নাগরিকের জন্য মার্কিন ভিসা নিষিদ্ধের আদেশ জারি করেন। দেশগুলো হচ্ছে ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান সিরিয়া ও ইয়েমেন। ভেনেজুয়েলার রাজনীতিকদেরও নিষিদ্ধের আওতায় রাখা হয়েছে মার্কিন ভিসা থেকে। এমন নির্দেশের বিরুদ্ধে ফেডারেল কোর্টের স্থগিতাদেশের মধ্যেই নতুন আরেকটি নির্দেশ জারির আভাস দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে উপরিউক্ত দেশের লোকজন চরমপন্থী, সন্ত্রাসী, মানবতার শক্রর মতো আচরণ করছে, বিধায় তারা আমেরিকার জন্য ‘বিপজ্জনক’ বলে মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিরেই মিয়ানমার, বেলারুশ, ইরিত্রিয়া, কিরগিজস্তান, নাইজেরিয়া ও তানজানিয়ার নাগরিকদের মার্কিন ভিসা বঞ্চিত করার নির্দেশ দেওয়ার কথা বিবেচনাধীন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি আলোচনায় থাকার মধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা নারীদের আমেরিকা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবরটি প্রকাশ পায়। প্রতিবছর হাজার হাজার নারী আমেরিকায় ভ্রমণে এসে সন্তান জন্ম দিয়ে চলে যান। মার্কিন নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, আমেরিকায় কোনোভাবে সন্তান জন্ম দিতে পারলেই সন্তানটি প্রশ্নহীনভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়ে যায়। চীন, রাশিয়া, ভারত, বাংলাদেশসহ বহু দেশের নাগরিকেরা মার্কিন নাগরিকত্ব আইনের এ সুযোগ নেন। প্রতিবছর এই বার্থ ট্যুরিজমের সংখ্যা বাড়ছে। কোনো সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর এমন কিছু ভ্রমণকারী আমেরিকায় আসেন শুধু সন্তান জন্ম দেওয়ার উদ্দেশ্যে।
২০১২ সালে প্রকাশিত এক তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৩৬ হাজার নারী কেবল সন্তান জন্ম দিতে আমেরিকা ভ্রমণ করেছিলেন ওই বছর। একটি আন্তর্জাতিক চক্র নানা দেশ থেকে বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপীয় দেশ ও চীন থেকে ব্যাপক অর্থের বিনিময়ে এমন ভ্রমণে নারীদের আমেরিকায় নিয়ে আসে।
নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, আমেরিকায় এসে সন্তান জন্ম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানটি শুধু নাগরিকত্বই পায় না, তার সঙ্গে সঙ্গে তার বাবা-মায়েরও একটি ইমিগ্রেশন ভিত্তি দাঁড়িয়ে যায়। তা ছাড়া আমেরিকায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে প্রতিবছর বার্থ ট্যুরিজমে আসা নারীদের চিকিৎসার জন্য মার্কিন নাগরিকদের দেওয়া করের অর্থ থেকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হয়। একই সঙ্গে সদ্যোজাত শিশুটিও আমেরিকার ব্যয়বহুল চিকিৎসা বিনা মূল্যে পেয়ে থাকে। সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে-পরে বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাধীন সুবিধাদিও তাঁদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। এই যাবতীয় সুবিধাকে মার্কিন রক্ষণশীল অংশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ‘অনাচার’ হিসেবে উল্লেখ করে আসছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্বের আইন এমনিতেই বাতিল করতে চান। এরই অংশ হিসেবে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের আমেরিকার ভিসা প্রদানে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে।
নতুন এই উদ্যোগের খবর প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, কনস্যুলার কর্মকর্তা কী করে নির্ধারণ করবেন যে একজন নারী অন্তঃসত্ত্বা কি না। এ ছাড়া কোনো নারী ভিসা গ্রহণের সময় প্রমাণ করলেন যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা নন। ভিসা পাওয়ার পর থেকে আমেরিকায় প্রবেশের সময় পর্যন্ত এ নারী গর্ভধারণ করলে, তখন বিষয়টি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নারীকে সীমান্ত বা বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে কি না। অভিবাসন কর্মকর্তাদের কি এ ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হবে? এমন বহু প্রশ্ন উত্থাপন করা হচ্ছে এখন। বিষয়টিকে অমানবিক বলেও উল্লেখ করছেন কেউ কেউ।