‘আলটিমেটামে বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের কোনো নজির কোথাও নেই’

প্রকাশিত: ৪:৪৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাস্তা আটকে জনদুর্ভোগ তৈরি না করে আন্দোলনরত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরতে ও শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যেতে ‘অনুরোধ’ জানিয়ে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘রাস্তায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ, আন্দোলন ও আলটিমেটামের মাধ্যমে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠনের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোনো নজির কোথাও নেই।’

আজ বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের পাঠানো বিবৃতিতে এ কথা বলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজও রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভ-অবরোধের কারণে মিরপুর সড়কসহ সায়েন্স ল্যাব মোড় ঘিরে আশপাশের সড়কগুলোয় দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীবাসী।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ‘বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন’ গঠন করতে হবে। কমিশন না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। সেইসঙ্গে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা কমিটিও প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অন্তর্র্বতী সরকার গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা এবং বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। একটি সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল অবস্থায় পাওয়া শিক্ষাখাতে শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। এ সব দাবি-দাওয়ার মধ্যে ন্যায্য-অন্যায্য এবং কিছুক্ষেত্রে পরস্পর বিরোধী দাবিও আছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘একটি বৈষম্যবিরোধী দাবি মানলে অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হতে পারে। শিক্ষাখাতের যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের দাবিপূরণের সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকে এবং এর জন্য তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া কঠিন। অথচ সব কয়টি দাবির পেছনে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিকেই সবচেয়ে অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছেন এবং দাবিগুলোকে শুধু রাস্তায় আন্দোলন করে তাৎক্ষণিক সমাধানযোগ্য মনে করছেন। এতে একদিকে যেমন রাস্তা অবরোধের ফলে অপরিসীম জনদুর্ভোগ হচ্ছে; সরকারও দাবিগুলো যথাযথ বিবেচনার সুযোগ পাচ্ছে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনার জন্য সরকার ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে জানিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘কমিটি সাত সপ্তাহের মধ্যে দ্রুত একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। সমস্যাটির শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে ঢাকার সাতটি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতা থেকে বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করার একটি অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের উভয় পক্ষেরই সমস্যা তৈরি হয়েছে। যে কারণে ওই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধা ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে।’

শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সমস্যাগুলো জটিল এবং এগুলোর সুষ্ঠু সমাধান কী হতে পারে তা বিবেচনায় ন্যূনতম কিছু সময়ের প্রয়োজন। এরই মধ্যে একটি কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করেছেন। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে।’

দেশের সমস্যাসঙ্কুল শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি একজন আজীবন শিক্ষক হিসাবে অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে তার সহানুভূতি আছে বলে মন্তব্যও করেন শিক্ষা উপদেষ্টা।

এমন পরিস্থিতিতে রাস্তায় জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ধৈর্য ধরার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ‘নিজ নিজ শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ’ করেন তিনি।