আলুর দাম ও সংরক্ষন নিয়ে চিন্তিত কৃষক

প্রকাশিত: ৩:২০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫

নীলফামারী প্রতিনিধি:

 

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আলুর দ্বিগুন ফলন হয়েছে। তবে উৎপাদিত আলুর ন্যায্য দাম ও সংরক্ষন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে কৃষক। কৃষকরা জানিয়েছে বীজ আলু প্রতি কেজি একশ টাকা কেজি দরে কিনে জমিতে রোপন করার কারনে আলু উৎপাদন ব্যায় দ্বিগুন হয়েছে।

বর্তমানে প্রতি কেজি আলুর বাজার মুল্য ১৩ টাকা থেকে ১৫ টাকা চলছে। ফলে বিঘা প্রতি কৃষকের লোসসান হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এদিকে হিমাগারে বীজ আলু সংরক্ষনের জন্য ভাড়া বৃদ্ধি করায় কৃষকের জন্য সেটা মরার উপর খরার ঘা হয়ে দাড়িয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৬ হাজার ৪ শ ৮০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরো ৬৫ হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ করা হয়। এবার আবহাওয়া ভাল থাকার কারনে আলুর ফলন দ্বিগুন হয়েছিল কিন্তু দাম না থাকার কারনে কৃষক উৎপাদন খরচ উঠাতে না পেরে চিন্তিত হয়ে পড়েছে।

গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নে কৃষকরা আলু উত্তোলনে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। কোন কোন কৃষক ধার দেনা পরিশোধ করার জন্য প্রতিকেজি আলু জমিতেই ১৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে ফেলছেন আবার কেউ কেউ আলু হিমাগারে সংরক্ষন করার জন্য আলু উত্তোলন করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

বাহাগিলি ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামের আলু চাষী হাবিবুর রহমান বলেন, আমি ১০০ টাকা কেজি দরে সেভেন জাতের ১৪ বস্তা (৭০০) কেজি আলু ৭০০০০ হাজার টাকায় কিনে ৭৫ শতক জমিতে রোপন করেছিলাম । আলু বীজবাদ দিয়ে শ্রমিক ,সার কীটনাশকসহ আমার উৎপাদন ব্যায় দাড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আলুর ফলন দ্বিগুন হওয়ার পরে আমার লোকসান হবে ৮০ হাজার টাকা।

একই গ্রামের কৃষক শামীম হোসেন বলেন, আমি ৭ বিঘা জমিতে আলু রোপন করেছিলাম , প্রতিবিঘাতে আমার উৎপাদন ব্যায় ৪০ হাজার টাকা করে। সে হিসাবে আমার লোকসান হবে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকার মত।

পানিয়ালপুকুর গ্রামের আলুচাষী সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর আমি আলু চাষ করি ১৫ থেকে ২০ বিঘা জমিতে এবারও ১২ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। এবার আলু চাষ করে আমি সর্বশান্ত হয়ে গেলাম। বর্তমানে আলুর দাম কম হওয়ার কারনে না পারছি বেঁচতে আবার না পারছি হিমাগারে সংরক্ষনের ব্যাবস্থা করতে। তিনি বলেন, হিমাগারে আলু সংরক্ষন করতে গেলে ৫০ কেজির একটি বস্তার দাম ৫৫ টাকা, আলু প্রসেসিংএ খরচ বস্তা প্রতি ২০ টাকা, হিমাগারের ভাড়া প্রতি কেজি ৮ টাকা হিসাবে চারশ টাকা, হিমাগারে নিয়ে যাওয়ার পরিবহন ব্যায় বস্তাপ্রতি ৪০ টাকা সব মিলে হিমাগারে সংরক্ষন করতে গেলেও প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় ব্যায় হবে ৭ থেকে ৮শ টাকা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, এবার আলুর ফলন বেশি হওয়ার কারনে আলুর দাম কমে গেছে। তিনি বলেন, বর্তমান আলুর মৌসুম হওয়ার কারনে দাম কমে গেছে। তিনি কৃষকদের আলু বিক্রি না করে হিমাগারে রাখার পরামর্শ দেন। হিমাগারে আলু সংরক্ষনের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী হক বলেন, কৃষকদের কথা চিন্তা করে হিমাগার মালিকদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।