আল-আকসা মসজিদের জন্য কেমন ছিল ২০২৪?

প্রকাশিত: ২:২৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

ফিলিস্তিনিদের ওপর বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে ২০২৩ সালের অক্টোরবের অবৈধ দখলদার দেশটিতে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাস। এরপর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। দুর্বিষহ করে তুলেছে ফিলিস্তিনের সাধারণ নাগরিকের জীবনযাত্রা। তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে আল আকসা মসজিদে প্রবেশের অধিকার।

ফিলিস্তিনের সর্বসাধারণের জন্য আল আকসায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করে শুধু পূর্ব জেরুজালেমের বাসিন্দা, ইসরায়েলি আরব ও চরমপন্থী ইহুদিদের প্রবেশের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে আল আকসা প্রাঙ্গণে চরমপন্থী তালমুদিক সম্প্রদায়ের প্রবেশ, তাদের প্রার্থনা ও আচার অনুষ্ঠান বেড়েছে এবং এই দৃশ্য প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভিরের নেতৃত্বে পবিত্র এই মসজিদটিতে চরমপন্থী ইহুদিদের অনুপ্রবেশ বাড়ানো হয়েছে। ২০২৩ সালের সালের অক্টোবর থেকে মসজিদে ইবাদতের অনুমতি পূর্ব জেরুজালেমের বাসিন্দা এবং ইসরায়েলের আরব নাগরিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। পশ্চিম তীর এবং গাজার বাসিন্দাদের সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বারবার জানিয়েছে, যে আল-আকসা মসজিদে ‘স্থিতাবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি, কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
২০২৩ সালের নভেম্বরে এক সংসদীয় অধিবেশনে বেন গভির বলেছিলেন, করেছিলেন, আমরা আল আকসা ও জেরুজালেমের সার্বভৌমত্ব ও শক্তি বৃদ্ধি করছি। ইহুদিদের সেখানে প্রার্থনা আর কোনো বাধা নেই। এই পরিবর্তিত নীতির কারণে আমি এতে খুব গর্বিত।

তিনি আল-আকসা মসজিদের জায়গায় ইহুদি উপাসনালয় তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন।

আগস্টে তিনি ইসরায়েলি আর্মি রেডিওর পক্ষ থেকে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি কি আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্সের পশ্চিম দেওয়ালের কাছে একটি সিনাগগ তৈরির পক্ষে কি না? এ সময় তিনি জবাব দেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ এবং হ্যাঁ। তার এই মন্তব্য ফিলিস্তিন তো বটেই ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায়ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

চলতি বছরগুলো আল আকসায় প্রবেশের নীতি ভঙ্গ করেছেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির। নীতি ভঙ্গ করে একাধিকবার তিনি মসজিদটিতে প্রবেশ করেন। এই ঘটনা ফিলিস্তিন, আরব,মুসলিম বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাঝে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

২০২৪ সালে আল আকসায় উগ্র ইহুদিদের অনুপ্রবেশ উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেছে আগ্রাসনে নেতৃত্বদানকারী-ডানপন্থী ইসরায়েলি দলগুলো।

জেরুজালেমের ইসলামিক ওয়াকফ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে আল আকসায় অনুপ্রবেশ করা ইহুদির সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। গেল বছরের জানুয়ারিতে ২৭৪০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৪২৩ জন, মার্চে ৩২৬২ জন, এপ্রিলে ৫৫২৭ জন, মে-তে ৩৪০৫ জন, জুনে ৪৭০৫ জন, জুলাইতে ৩৩৮৫ জন, আগস্টে ৭৪৪০, সেপ্টেম্বরে ৪০৬৪ জন, অক্টোবরে ৯৭৫০ জন এবং নভেম্বরে ৩৭৯৭ জন মিলিমে ২০২৪ সালে ৫০ হাজারের বেশি ইহুদি আল আকসায় প্রবেশ করেছে।

এর আগে সপ্তাহে একদিন আল-আকসায় ইহুদিদের প্রবেশে অনুমতি ছিল। তবে সেখানে তারা কোনো প্রার্থনা ও আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে পারতো না। ইসরায়েলি পুলিশও তাদের তালমুদিক আচার-অনুষ্ঠান পালনে বাধা দিতো। কিন্তু বর্তমানে সেখানে নিয়মিত ইহুদিরদের উচ্চস্বরে তালমুদিক আচার, তাদের নিয়মে মাথা ঝুঁকে প্রণাম, ইসরায়েলি পতাকা উত্তোলন, এবং নাচার দৃশ্য দেখা যায়। ইহুদিদের ছুটির দিনগুলোতে এই উপদ্রব বৃদ্ধি পায়।

২০২৪ সালের আগস্টে ওয়াকফ কাউন্সিল, ইসলামিক সুপ্রিম অথরিটি, ফিলিস্তিননের ফতোয়া বিভাগ এবং ওয়াকফ প্রশাসনসহ জেরুজালেমের ইসলামিক প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, আমরা আল আকসা সম্পর্কিত ইসরায়েলের উগ্রপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভিরের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং আপত্তিকর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। আল আকসার অভ্যন্তরে উপাসনালয় নির্মাণ বিষয়ে তার সাম্প্রতিক আহ্বান গ্রহণযোগ্য নয়।

তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আরও বলেছেন, আল আকসায় ইসরায়েলি সরকারের ক্রমবর্ধমান অপবিত্রকরণ এবং ইহুদীকরণের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। চরমপন্থী ইহুদিদের স্বার্থ রক্ষা ও আল-আকসার অপবিত্রতার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী দুই বিলিয়ন মুসলমানের অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে।