আহত শ্রমিক ও ক্ষয়ক্ষতির দায় প্রশাসনের’

প্রকাশিত: ১:৩৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪

সাজ্জাদ হোসেন 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নির্মাণাধীন শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হলের ১০তলা ভবনের ছাদের একাংশ ধসের ঘটনায় শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও ক্ষয়ক্ষতির দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা।বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি সংগঠনের প্রতিনিধিদের এক যৌথ বিবৃতিতে এসব তথ্য জানান তারা।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী ছাত্র সংগঠনগুলো হলো- সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, নাগরিক ছাত্র ঐক্য, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও ছাত্র গণমঞ্চ।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভবন ধসের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির সকল দায় নিশ্চিতভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। ভবন ধস ও ধারাবাহিক ছাত্র-শ্রমিক হতাহতের ঘটনায় খুনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন’র নামে মামলা এবং শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। এছাড়া ভবনটির নির্মিত কাঠামোর স্থায়ীত্বের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে, নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করে নতুন ঠিকাদার দ্বারা ভবনের কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান তারা।’

বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, ভবন ধস ও শ্রমিক হতাহতের এ ঘটনা কোনো অপ্রত্যাশিত কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় নয়। ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর একই ভবনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শ্রমিক ইউনুস আলী, ২০২২ সালের ৩১ আরেক নির্মাণাধীন ২০তলা একাডেমিক ভবনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শ্রমিক সাগর এবং ২ ফেব্রুয়ারি ভবনগুলোর নির্মাণসামগ্রী বহনকারী ট্রাকের চাপায় শিক্ষার্থী হিমেল হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিক ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বড় ক্ষয়ক্ষতির আভাস দিচ্ছিল। অথচ লাগাতার হত্যাকাণ্ডের পরও প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে দায়িত্বে অবহেলা করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ভবনগুলোর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশনের বেপরোয়া দুর্নীতি, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে একটি ‘হত্যা কাঠামো’ সৃষ্টি হয়েছে। যা দ্বারা যে কেউ যেকোনো মুহূর্তে আক্রান্ত হতে পারে।

নির্মাণাধীন ভবনের কাঠামোটি নিরাপদ নয় উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ভবনটির ধসে পড়া অংশে একটি পিলার হেলে গিয়েছে। এই ঘটনায় ভবনের বাকি কাঠামোর স্থায়ীত্ব, রডসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর উপযুক্ততা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। অনিরাপদ কাঠামো ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনা বয়ে আনবে। তাই নতুন করে কাজ শুরু করার আগে অবিলম্বে নিরপেক্ষ প্রকৌশল কর্তৃপক্ষ দ্বারা ভবনটির মান যাচাই করতে হবে।

এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে এসব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন , কৃষক শ্রমিক গণমানুষের অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের এমন চরম অনিরাপত্তার নজির লজ্জাজনক। এই পরিবেশে শিক্ষার্থীরাও যে নিরাপদ নয়, হিমেল হত্যাকাণ্ড তার প্রমাণ। এমন অনিরাপদ পরিবেশ দীর্ঘায়িত হতে থাকলে আরও ভয়াবহ হতাহতের মুখোমুখি হবো আমরা। তাই নিজেদের এবং সকলের নিরাপত্তার স্বার্থে এই ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নির্মাণাধীন ১০তলা বিশিষ্ট শহীদ এমএইচএম কামারুজ্জামান হলের ছাদের একাংশ ধসে পড়ে। এতে পাঁচজন শ্রমিক আহত হলে তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেকে) ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি।