ইউক্রেন যুদ্ধ তাহলে কী বন্ধ হচ্ছে?

প্রকাশিত: ১২:৪১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৩, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

 

ইউক্রেন রাজি হওয়ার পর যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা করতে এবার রাশিয়া যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল। বুধবার (১২ মার্চ) এ খবর জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইতোমধ্যেই ইতিবাচক বার্তা পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

যদিও এরপর নিজেই স্বীকার করেছেন, বাস্তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের ইতিবাচক বার্তার কোনো মূল্য নেই।

বুধবার ওভাল অফিসে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিনের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন যে, কিন্তু ইতিবাচক বার্তার কোনো মানে হয় না। এটি খুবই গুরুতর একটি পরিস্থিতি।

বিবিসি বলছে, এমন একটি সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ কথা বললেন যার একদিন আগে সৌদি আরবের জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ইউক্রেনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। দীর্ঘ আলোচনার পর ইউক্রেন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়।

ওই আলোচনায় অংশ নেওয়া মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বৈঠক শেষে এক মন্তব্যে তিনি “বল এবার রাশিয়ার কোর্টে” বলে উল্লেখ করেন।

যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শিগগিরই একটি প্রস্তাব মাস্কোতে পাঠানো হবে বলেও তখন জানিয়েছিলেন রুবিও।

জেদ্দায় অনুষ্ঠিত মঙ্গলবারের বৈঠকের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কিও বলেছেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে রাশিয়াকে রাজি করানো এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব।

এদিকে, ক্রেমলিন জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি ভেবে দেখছে। বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্টের ভ্লাদিমির পুতিন ফোনে কথা বলতে পারেন বলেও জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে, সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি বিষয়ে আলোচনা চলমান থাকার মধ্যেই ইউক্রেনে যুদ্ধ আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। বুধবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কুরস্ক অঞ্চলের একটি কমান্ড পোস্ট পরিদর্শন করেছেন বলেও ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

প্রতিনিধি দলে কারা?

রাশিয়াকে রাজি করানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে প্রতিনিধি দলটি পাঠাচ্ছে, সেখানে ঠিক কারা কারা আছেন, সেটি অবশ্য স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প। তবে হোয়াইট হাউসের এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে হোয়াইট হাউসের ঘনিষ্ট একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছিল যে, জেদ্দায় আলোচনা শেষে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ যুদ্ধবিরতির আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব নিয়ে মস্কো যেতে পারেন।

বুধবার হোয়াইট হাউসের ব্রিফিংয়েও প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে। “এই পরিকল্পনায় সম্মত হওয়ার জন্য আমরা রুশদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা শান্তির সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছে গেছি,” বলেন প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট।

ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে যে, তারা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি বিশদভাবে পর্যালোচনা করে দেখছেন।

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাশিয়া রাজি হবে কি-না, বিষয়টি আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে জানান রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।

ফের তীব্র হচ্ছে লড়াই

সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি বিষয়ে আলোচনা চলমান থাকার মধ্যেই ইউক্রেনে যুদ্ধ আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রাতারাতি জেলেনস্কির জন্মস্থান ক্রিভি রিহ ছাড়াও বন্দর শহর ওডেসা, ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক এবং খারকিভের একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে বলে জানা যাচ্ছে।

রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলেও সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রে পেসকভ বলেছেন যে, রুশ সেনারা সফলভাবে অগ্রসর হচ্ছে।

যেসব এলাকায় ইউক্রেনের সেনারা আগে দখলে নিয়েছিল, সেগুলো পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে। ক্রেমলিন জানিয়েছে যে, বুধবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কুরস্ক অঞ্চলের একটি কমান্ড পোস্ট পরিদর্শন করেছেন।

ওই অঞ্চলে পুতিনের এটাই প্রথম সফর বলে জানা যাচ্ছে। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সফরকাল রুশ প্রেসিডেন্ট ওই অঞ্চলটিকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করার জন্য সেনাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ছাড়া মঙ্গলবার ইউক্রেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার আলোচনায় যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে যে প্রস্তাব উঠে এসেছে, সেটা নিয়ে পুতিন এখনও কোনো মন্তব্য করেননি।

অন্যদিকে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর প্রধান ওলেকজান্ডার সিরস্কি বুধবার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তাদের কিছু সৈন্য কুরস্ক থেকে সরে যাচ্ছে।

টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে একটি পোস্টে তিনি বলেছেন, সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতেও আমাদের অগ্রাধিকার ছিল ইউক্রেনের সেনাদের জীবন বাঁচানো।

এমন জটিল পরিস্থিতির মধ্যেও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়া ব্যাপারে আশাবাদী ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ওভাল অফিসে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেছেন যে, রাশিয়ার জন্য যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়াটা যুক্তিসঙ্গত হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন মন্তব্যও করেছেন যে, রাশিয়াও খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। যদিও এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

(যুদ্ধের) একটি পক্ষের সঙ্গে আমাদের একটি অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতির সমাধান হয়েছে। মোটামুটি সমাধান হয়ে গেছে। আমরা ভূমি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছি, বলেন ট্রাম্প।

যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইউক্রেনকে রাজি করানোর জন্য রীতিমত চাপ প্রয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার ওভাল অফিসে জেলেনস্কির বাদানুবাদের ঘটনার পর ইউক্রেনে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও সামরিক সহযোগিতা বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

এখন যুদ্ধের আরেকপক্ষ রাশিয়াকে রাজি করানোর জন্যও যদি চাপ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, সেক্ষেত্রে কীভাবে সেটি করবে যুক্তরাষ্ট্র?

“আমরা আর্থিকভাবে কিছু করতে পারি,” বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে সেটা রাশিয়ার জন্য খুবই খারাপ হবে। আমি সেটা করতে চাই না, কারণ আমি শান্তি চাই, বলেন তিনি।