কুষ্ঠিয়া প্রতিনিধি:
বিভাগের রিটেক পরীক্ষা দিতে হলে থাকতে এসে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মী। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ থেকে রক্ষা পেতে থানায় আশ্রয় নেন তিনি। পরে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শনিবার (৫ অক্টোবর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদ্দাম হোসেন হলে এ ঘটনা ঘটে। ঐ ছাত্রলীগ কর্মীর নাম আবদুল হাফিজ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জুলাইয়ের আন্দোলনে হুমকি, আওয়ামী সরকারের সময় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে চলাফেরা করা এবং হলের ডাইনিং ও বিভিন্ন দোকানে বাকি খাওয়াসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন তিনি।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, বিভাগের রিটেক পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে আসেন হাফিজ। বিকালের দিকে হল গেট থেকে শিক্ষার্থীরা নিষেধ করার পরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি জোরপূর্বক হলে ঢুকে ৩৩৩ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেন। পরে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জানতে পেরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই কক্ষের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তারা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সহ-সমন্বয়ক তাকে নিরাপদে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিতে হলের গেটে নিয়ে আসলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। পরে সেখানে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ছাত্রলীগ বিরোধী স্লোগান দিয়ে তাকে ধাওয়া করে। পরে তিনি হলের সামনে থেকে দৌড়ে ফুটবল মাঠের মধ্য দিয়ে ইবি থানায় আশ্রয় নেন।
পরে থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন, পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কদের উপস্থিতিতে দোকানের বাকি টাকা পরিশোধ করলে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হবে মর্মে তার থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ কর্মী হাফিজ বলেন, পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। কিন্তু এরকম কিছু হবে ভাবিনি। শিক্ষার্থীরা আমাকে অন্য হাফিজ (শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) ভেবেছিলো। সে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের মারধর করেছিলো। আমি সেই হাফিজ না। আমি ছাত্রলীগের সঙ্গেও জড়িত ছিলাম না। আর ডাইনিং ম্যানেজার ও দোকানদারদের টাকা রোববারের মধ্যে দিয়ে দেব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক তানভীর মণ্ডল বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্ত করে তাকে নিরাপদে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। পরে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে সে থানায় আশ্রয় নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক ড. এয়াকুব আলী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ফোন দিলে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। আগামী ৭ তারিখের মধ্যে তাকে বাকি টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। টাকা পরিশোধ করলে তাকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
ইবি থানার ওসি মামুনুর রহমান বলেন, এটি থানার কোনো বিষয় নয়। মারধরের শিকার শিক্ষার্থী থানায় আশ্রয় নেয়। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মীমাংসা করে চলে যান।