ইবি ছাত্রী ফুলপরীকে নির্যাতন: অন্তরাসহ ৫ জনের বহিষ্কারাদেশ বাতিল, ফের সাজা নির্ধারণের নির্দেশ

প্রকাশিত: ১০:৪১ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অন্তরাসহ পাঁচ ছাত্রীকে এক বছরের জন্য সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাদের ওই ৫ জনের সাজা পুনরায় নির্ধারণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে (ভিসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ২৩ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নির্ধারিত দিনে এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে আজ বুধাবার (২৬ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান। বিষয়টি নিউজ পোস্টকে নিশ্চিত করেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট গাজী মোহাম্মদ মুহসীন।

এ বিষয়ে ইবির আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি এক বছরের জন্য পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট-১৯৮৭ এর বিধান অনুসারে শাস্তির বিষয়ে প্রথম সিদ্ধান্ত নেবেন উপাচার্য। উপাচার্যের শাস্তি যথাযথ হয়েছে কি না সে ব্যাখ্য-বিশ্লেষণের পর চূড়ান্তভাবে শাস্তি বা সাজা আরোপ করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটি। শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্তে শাস্তি কম-বেশি হতে পারে। কিন্তু এই পাঁচ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে উপাচার্য কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটি সরাসরি শাস্তি আরোপ করেছেন। পাঁচজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছেন। কিন্তু এই বহিষ্কার আদেশটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় না হওয়ায় তা বাতিল করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নতুন করে শাস্তি বা সাজা আরোপ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তিনি আরও বলেন, উচ্চ আদালত বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিধি অনুসারে সাজা বা শাস্তি আরও বেশি দেওয়ার সুযোগ আছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই বলেছে জঘন্য অপরাধ (ফুলপরীকে নির্যাতন) ঘটেছে, তাই আদালত বলেছেন, সে হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে সাজা আরও বেশি দিতে পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদনে বলেছে, এক বছরের বহিষ্কারাদেশকে সর্বোচ্চ সাজা।

আইনজীবী গাজী মো. মহসীন সাংবাদিকদের বলেন, আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান হচ্ছে ছাত্রত্ব বাতিল মানে স্থায়ী বহিষ্কার। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কোড অব কন্ডাক্ট অব স্টুডেন্ট, ১৯৮৭’র প্রথম অধ্যায়ের ৪,৫ ও ৭ ধারা এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৮ ধারা সর্বোচ্চ শাস্তির কথা বলা আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছেন, তারা সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছেন। কিন্তু এক বছরের জন্য বহিষ্কারাদেশ তো সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন প্রতিবেদনে আদালত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

এর আগে গত ১৯ জুলাই ইবি ছাত্রী নির্যাতনে সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের আদেশ বিধিসম্মত হয়নি বলে মন্তব্য করেছিলেন আইনজীবী।

ফুলপরীকে নির্যাতনে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে গত ১৫ জুলাই এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ সময়ে বহিষ্কৃতরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষাসহ কোনো কিছুতেই অংশ নিতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এটা সর্বোচ্চ শাস্তি বলে জানিয়েছেন প্রক্টর শাহাদৎ হোসেন।

বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও একই বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান। এর মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। অন্যরা ছাত্রলীগের কর্মী। নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্য, সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তার অনুসারীরা তাকে নির্যাতন করেন। এ সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল ও ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরে ভুক্তভোগী ফুলপরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় রিট হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। তদন্ত প্রতিবেদনে নির্যাতনের সত্যতা মিললে অভিযুক্তদের হল এবং শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও নির্যাতনকারীদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।